প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা সাপাহারে  সহায় সম্বলহীন এক  নারীকে অন্ন-বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব নিলেন  ইউএনও...

সাপাহারে  সহায় সম্বলহীন এক  নারীকে অন্ন-বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব নিলেন  ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন

361
0
হাফিজুল হক, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর সাপাহারে  সহায় সম্বলহীন মানসিক ভারসাম্যহীন গীতা রানী (৫৫) নামে এক বস্ত্রহীন মুমূর্ষ নারীকে অন্ন,বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে মৃত্যুর মুখ হতে ফিরিয়ে সুস্থ করলেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন।
উল্লেখ্য যে, গত শনিবার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে  উপজেলার শিরন্টী ইউনিয়নের পাগলার মোড় নামক স্থানে বেওয়ারিশ মানসিক ভারসাম্যহীন বীভৎস অবস্থায় তিন দিন যাবত পড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যান সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন।
 ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেখতে পান  পরিত্যক্ত মার্কেটের মধ্যে  বীভৎস, বস্ত্রহীন মুমূর্ষ অবস্থায় পড়ে আছেন ঐ নারী । প্রসব-পায়খানা করছেন,হিতাহিত কোন প্রকার জ্ঞান নেই। তাৎক্ষণিক বস্ত্রহীন অসুস্থ ওই মহিলাকে লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিজের সহধর্মীনির বস্ত্র দিয়ে ইজ্জত ঢাকানোর পর  চিকিৎসার জন্য সাপাহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে চিকিৎসা প্রদান পূর্বক ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং উদ্ধারকৃত অসুস্থ নারীকে দেখভালের জন্য স্থানীয় এক মহিলাকে নিজ খরচে নিয়োজিত করেন ইউএনও।এই সময় তার সাথে ছিলেন সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মানিক, সিনিয়র সহ সভাপতি হাফিজুল হক,  ওই এলাকার একজন সমাজ সেবক ও অধ্যাপক আজিজুর রহমান প্রমুখ।
গীতা রানীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, প্রায় ৫ বছর আগে সাপাহার উপজেলা আসে এই নারী। মানসিক ভারসম্য হারিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। ২ বছর আগে ২ মাস থেকেছেন শিরন্টি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ শ্রী যোগেশের বাড়িতে।
এরই সূত্রধরে কথা হয় গ্রাম পুলিশ যোগেশের সাথে। তিনি জানান, এই নারী প্রায় ৫ বছর থেকে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় থাকেন। ২ বছর আগে ২ মাস আমার বাড়িতে ছিলেন। তখন তার ঠিকানা খুজে বের করে ছিলাম। তার নাম গীতা রানী। মান্দা উপজেলায় তার বাড়ি ছিল। সেখানে দেড় বিঘা জমি আছে। কিন্তু তার স্বজনেরা তাকে নিতে চাননা। কারণ হিসেবে তারা যোগেশকে জানান, হিন্দু থাকা অবস্থায় তার বিয়ে হয়ে ছিল। পরে স্বামী-সন্তান রেখে মুসলমান ধর্মান্তরিত হয়ে এক মুসলিম বিবাহিত যুবককে বিয়ে করেন। কিন্তু ওই যুবকের আগের স্ত্রী তাকে বাড়িতে উঠতে দেয়নি। এরপর কিছু দিন তারা আলাদা সংসার করে। এক সময় ওই স্বামী তালাক দিয়ে দেয় তাঁকে। এর পর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দিক-বিদিক ঘুরে বেড়ান গীতা। ২ বছর আগে খুব কষ্টে তার স্বজনদের সন্ধান পাই। এতো দিনে তার ঠিকানা ভুলে গেছি।
এদিকে ভর্তির পর হতে তার খোঁজখবর নিতে থাকেন মানবিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন।এরই প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার (১২ জুন) দুপুরে গীতা রানীর ব্যবহারের জন্য নতুন কাপড় নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আন মামুন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পলা কর্মকর্তা ডা. মুহা. রুহুল আমিন।
সমাজসেবা অফিসার তৌফিকুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সেইফ হোম রয়েছে। ইউএনও সহদোয় চাইলে সেখানে গীতা রানীকে স্থায়ী ভাবে থাকার একটা সু-ব্যবস্থা করা সম্ভব্য হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, একজন মানুষ হিসাবে একজন মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দ্বায়িত্বের মধ্য পড়ে। আমি সেটাই প্রতিপালন করেছি। গাতী রানী পুরোপুরি সুস্থ্য হলে তাঁকে সেইফ হোমে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা হবে।