অনলাইন ডেস্ক: বহির্বিশ্বে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার । দলটি মনে করে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ওপর পশ্চিমা দেশগুলো ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের যে ‘একচেটিয়া’ সমর্থন ছিল, তা আর এখন নেই। এই অবস্থায় প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ওপর থেকে ওই দেশগুলোর সমর্থন আরও কমিয়ে এনে দলটিকে ‘বন্ধুহীন’ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, নির্বাচনের পর যেসব দেশের ক্ষমতাসীন সরকারকে নিয়ে ‘অস্বস্তি’ ছিল, তাদের সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগ নানাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, যোগাযোগ বৃদ্ধি, দেশের স্বার্থ ঠিক রেখে দেশগুলোর ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ করার কাজগুলো গুরুত্বসহকারে করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের নৃশংসতা, ষড়যন্ত্র তুলে ধরা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার বিদেশিদের এই বার্তাও দিয়েছে, তারা চান না বাংলাদেশে সফররত বিভিন্ন দেশের সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করুক।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বিএনপির ভালো সম্পর্ক আছে। কিন্তু মোসাদ ইস্যুতে দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থায় হোঁচট খাবে। এটা দ্রুত কাটিয়ে না উঠলে বিএনপি দল হিসেবে আরও সংকটে পড়বে। তিনি আরও বলেন, সরকারের কূটনৈতিক অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আর কোনো চাপে নেই সরকার। সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন কাটিয়ে উঠেছে সরকার। সরকারকে সমস্যায় ফেলতে গিয়ে বিএনপিই সমস্যায় পতিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, সরকার এখন দেশ-বিদেশের চাপমুক্ত। বিএনপি-জামায়াত-সমর্থিত জোটের ‘জঙ্গিবাদী’ কার্যক্রমে জোটটি এখন বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ভারতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এম আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের বিষয়টিকে ছবিসহ গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ব্র্যান্ডিং-রিব্র্যান্ডিং’ করছে সরকার-সংশ্লিষ্টরা। এতে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক কমে আসবে বলে তাঁদের ধারণা। পাশাপাশি সম্প্রতি কুয়েতের আমির, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ সফরকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। এটিকে আওয়ামী লীগ ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। দলটি মনে করছে, এর ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও প্রশ্ন তৈরি হবে।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জয়ের ওপর অনেক হামলার হুমকি এসেছে। বিএনপির এসব কর্মকাণ্ড নতুন কিছু নয়। এ জন্য উচিত ওদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মোসাদের সঙ্গে বিএনপির নেতা আসলামের বৈঠক হয়েছে, এটাকে আমরা সত্য বলে মনে করি। তাঁর বৈঠক-সম্পর্কিত নথিপত্র আমাদের কাছেও আছে। এতে মুসলিম বিশ্ব বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে বিমুখ হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, কী কারণ বা উদ্দেশ্য নিয়ে আসলাম মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, তা তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। এ জন্য আসলামকে পুলিশি হেফাজতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত সরকার আগেই নিয়েছিল।
আসলাম চৌধুরী গতকাল রোববার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এম আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ইহুদি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই সরকারকে উৎখাত করবে এবং বিএনপি ক্ষমতায় এসে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে—এই হলো তাদের ষড়যন্ত্র।
আসলামকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তিনি দেশে নাশকতা করে ক্ষান্ত হননি; বিদেশেও গিয়েছেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, মোসাদের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে সরকার। */জিখবর/প্রথম আলো