প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা মোরেলগঞ্জে হিসাবরক্ষণ অফিসে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম : ভোগান্তিতে উপজেলাবাসী

মোরেলগঞ্জে হিসাবরক্ষণ অফিসে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম : ভোগান্তিতে উপজেলাবাসী

163
0

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, মোরেলগঞ্জ(বাগেরহাট) থেকে :

মজিব বর্ষের ডিজিটাল যুগেও দেড় বছর ধরে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদ শুন্য ৩ জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম । বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ দেশের সর্ববৃহৎ একটি উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের ৮ টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন। উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট ১ টি, ২ টি জুনিয়র অডিটর ও ১টি অফিস সহায়কের পদও ৫ টি শুন্য থাকায় । ২৯ টি সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বৃহৎ এই উপজেলার তৃণমূলে তথা সরকারি অফিস জনসেবায় উপজেলা হিসাব রক্ষক অফিস জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। মাসের বেশির ভাগ সময়ই ব্যতি-ব্যস্ত থাকতে হয় ওই অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতা, পেনশন, উৎসবভাতাসহ সরকারি সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিল উত্তোলনে হিসাব রক্ষক অফিসে জনসমাগম নিত্যচিত্র। এতো বড় একটি উপজেলায় দেড় বছর যাবৎ উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার পদ শুন্য থাকায় দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ধীরগতিতে চলছে কার্যক্রম।অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,কাগজে কলমে ৮ টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন, উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট ১ টি, ২ টি জুনিয়র অডিটর ও ১টি অফিস সহায়কের পদও শুন্য রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সেবা প্রার্থীরা,প্রশাসনিক অনেক কার্যক্রমেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া হিসাবরক্ষণ অফিসের সেবা কার্যক্রম নিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরসহ সেবা প্রত্যাশীদের নানাবিধ অভিযোগও রয়েছে।

মোরেলগঞ্জ হিসাব রক্ষন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখে তৎকালীন হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন প্রমোশন নিয়ে অনত্র বদলী হয়ে যান। তখন থেকে ওই পদটি শুন্য রয়েছে। পরবর্তীতে পাশ্ববর্তী শরণখোলা উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জি এম নুরুল আমিনকে মোরেলগঞ্জ উপজেলায় (অতিরিক্ত) দায়িত্ব প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এরপর তাকে প্রত্যাহার করে চলতি বছরের ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি কচুয়া উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামকে মোরেলগঞ্জে আবারও (অতিরিক্ত) দায়িত্ব দেয়া হয়।

উল্লেখ্য মনিরুল ইসলাম এই উপজেলায় দায়িত্ব পালন কালে সেবাগ্রহীতাদের কাছে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন,সচ্ছতার সাথে তিনি প্রতিটি দপ্তরের বিল অনুমোদন দিয়েছেন। পরে তাকে সরিয়ে আবারও জি এম নুরুল আলমকে ( অঃদ) দায়িত্ব দেন কতৃপক্ষ। এ বছর জুলাই মাসে নুরুল আলম অবসরে চলে যান, বর্তমানে রুপসা উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মদন কুমার (অঃদ) হিসেবে এখানে সপ্তাহে দুইদিন দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবেই চলছে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তর।

প্রতিদিন শত শত লোক তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য বিল অনুমোদনসহ বিভিন্ন কাজে এ অফিসে আসতে হয়। সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, দীর্ঘদিন চাকরি জীবন শেষ করে অবসরে গেলাম, পেনশনের কাগজপত্র নিয়ে প্রায়ই সিড়ি বেয়ে ৩ তলায় একাউন্ট অফিসে উঠতে কষ্ট হয়, একাউন্ট অফিসার থাকে না। ৫ দিনের কাজ শেষ করতে ২ মাসও লেগে যায়, এখানে একজন হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা স্থায়ীভাবে দরকার।

উপজেলায় কর্মরত একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, এতো বড় একটা উপজেলায় স্থায়ীভাবে একজন হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা না থাকার কারনে সঠিক সময়ে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিল প্রস্তুত ও ছাড় করতে আমাদের চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আরো কয়েকজন সেবাগ্রহিতা বলছেন, অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রুপসা থেকে সপ্তাহে দুইদিন মোরেলগঞ্জ অফিস করার কথা থাকলেও তিনিও সঠিক সময়ে অফিসে আসতে পারেন না, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের বিল ছাড় করতে অপেক্ষা করতে হয়। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহিতারা এবং ব্যাহত হচ্ছে নানামূখী সেবা।

উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা(অঃদ)মদন কুমার জানান, সপ্তাহে দুইদিন মোরেলগঞ্জে অফিস করি, দুইদিনই রাত জেগে কাজ করতে হয়, তারপরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল সময়মত অনুমোদন দিতে পারি না, এতো বড় একটা উপজেলায় স্থায়ীভাবে হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা খুব জরুরি।

মোরেলগঞ্জে স্থায়ীভাবে হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক নুরুল আবসারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা মোরেলগঞ্জসহ কয়েকটি বড় উপজেলায় স্থায়ীভাবে হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা দেয়ার জন্য হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, তবে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা যদি হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা চেয়ে মহানিয়ন্ত্রকের কাছে চিঠি দেয় সেটা আরও বেশী কার্যকর হবে। সংবাদ প্রকাশ হলে দ্রুততম সময়েই স্থায়ীভাবে অফিসার পাওয়া যাবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
গুরুত্বপূর্ণ এ অফিসের শূন্যপদগুলোতে দ্রুত লোকবল নিয়োগ দিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মহল।