প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে নওগাঁর চাষিরা

শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে নওগাঁর চাষিরা

209
0

শামীম আনসরী, নওগাঁ প্রতিনিধি:  উত্তরা অঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এ জেলায় সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয় ধান। ধান চাষের পাশাপশি সবজি চাষে পিছিয়ে নেই এ জেলার কৃষকরা। গত বছর করোনাকালীন সময় শাকসবজিতে তেমন দাম না পাওয়ায় এবার বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করেছেন চাষীরা। শীতের আগাম সবজি বাজারে তুলতে পারলেই বেশি টাকা আয় করা যায়। বিষয়টি মাথায় রেখে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে নওগাঁর চাষিরা।

কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা শীতকালীন সবজির চারা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ সেই চারা ক্ষেতে লাগাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষেত আগাছামুক্ত করতে নিড়ানি দিচ্ছেন। তবে এবার মহামারি করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আগাম সবজি চাষে কৃষকরা মণ প্রাণ সপে দিয়ে কাজ করছেন মাঠে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমে জেলায় ২ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৫৪০ হেক্টর, রানীনগরে ৮০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৮০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৮০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২৬০ হেক্টর, পত্নীতলায় ২৪৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ৪৭৫ হেক্টর, সাপাহারে ২০ হেক্টর, পোরশায় ৮০ হেক্টর, মান্দায় ৫২০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় ২০০ হেক্টর। এরমধ্যে শিম ৫২০ হেক্টর, মুলা ১৩০ হেক্টর, বেগুন ২৮০ হেক্টর, ফুল কপি ৮৫ হেক্টর, বাঁধা কপি ৩০ হেক্টর, পালংশাক ১০৫ হেক্টর এবং লালশাক ৭৫ হেক্টর শীতকালীন শাকসবজি।

ক্ষেতজুড়ে ছেয়ে আছে লালশাক। পাশাপাশি ক্ষেতে আগাছাও একেবারে কম জম্নায়নি। তাই ক্ষেতের মধ্যেই বসেছিলেন কৃষক হজরত আলী। সেই কাকডাকা ভোরে জমিতে পা ফেলেন। এরপর থেকেই ক্ষেতের সবজি গাছগুলো ঠিকঠাক রেখে আগাছার গোড়ায় দাউল (স্থানীয় ভাষা) চাচ্ছিলেন অবিরাম হজরত আলী। কাজের চাপে সকালের খাবারের কথাও যেন ভুলে গিলেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য বাড়ি থেকে খাবার আসার পর খাবারের কথা স্বরণ হয় তার।

ঝটপট মুখ-হাত ধুয়ে খাবার খেয়ে আবার একই কাজ শুরু করেন এই কৃষক। শীতকালীন আগাম সবজি চাষে এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের কৃষকরা। কোদাল, দাউল, মাথল, লাঙল গরুসহ আনুষাঙ্গিক কৃষি সরঞ্জামাদি নিয়ে কাকডাকা ভোরে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েন কৃষকরা। এরপর ক্ষেতে গিয়ে যে যার মতো কাজে নেমে পড়েন। তাদের কেউ দাঁড়িয়ে বা কোমর বাঁধিয়ে কোদাল মারতে থাকেন। আবার কেউবা গাছ ঠিকঠাক রেখে চারপাশ দিয়ে দাউল চালাতে থাকেন অবিরাম। কেউ কেউ জমি প্রস্তুতির কাজের লাঙল গরু দিয়ে হালচাষের কাজ করছেন। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের আবর্তে গরু দিয়ে হালচাষ পদ্ধতি হারিয়ে যেতে বসেছে। শীতের সবজির বর্ণিল সবুজে ভরে উঠেছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, বেগুন, মুলা, পটল, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতের সবজি। নওগাঁ জেলার কয়েকটি উপজেলার একাধিক সবজিখ্যাত গ্রাম ঘুরে শীতের সবজি নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততার এমন দৃশ্য ওঠে আসে।

বর্ষাইল ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন আলী বলেন, সদর উপজেলার বর্ষাইল, র্কীত্তিপুর ও বক্তারপুর ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ সবজির আবাদ হয়ে থাকে। আগাম সবজির আবাদ করায় চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আমরা নিয়মিত চাষিদের মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া চাষিদের কাছে আমাদের ফোন নাম্বার দেয়া আছে, যে কোন পরামর্শ ও সমস্যায় তারাও আমাদের সাথে যোগাযোগ করে থাকেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামশুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম জাতের শাকসবজির ভাল উৎপাদন হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাষীরা বেশি পরিমাণে শাকসবজির চাষ করেছে। আগাম জাতের শাকসবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ভাল দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে চাষীরা।

তিনি বলেন, এ বছর বন্যা ও দুর্যোগ না হওয়ায় কৃষকরা বীজ বপন থেকে শুরু করে চারা পরিচর্যা সুষ্ঠু ভাবে করতে পারছে। তেমন কোন রোগবালাই নেই। এখন অল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে ভরা মৌসুমে কৃষকরা ভালো দাম পাবে বলে আশা করছি।#
ক্যাপসন: এভাবে সবজির ক্ষেত পরিচযায় ব্যস্ত সময় পার করছে নওগাঁর কৃষকরা। ছবিটি নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল মাঠ থেকে তোলা হয়েছে।