বিশেষ প্রতিবেদন:
১। নারীবাদ ধারণাটি বর্তমান বিশ্বে একটি প্রতিষ্টিত ধারণা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা , শিক্ষা ও চেতনার অভাব এবং উগ্র ধর্মীয় চেতনার কারণে তা সর্বজনীনতা পায়নি। নারীবাদ বলতে খুব সাধারণভাবে মানুষ হিবেবে নারীদের স্ব-পক্ষের অধিকারের কথাকে বোঝায়। এ অধিকার তার অস্তিত্বের সাথে জড়িত। মানুষ জন্মগ্রহণ করে কিছু মৌলিক অধিকার নিয়ে । এ জন্মগত অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করার অধিকার কারও থাকে না । তারপরও নারীরাই বঞ্চিত কারণ নারীদের শিক্ষা ও চেতনার অভাব। তাছাড়া রাষ্ট্রযন্ত্রের এ বৈষম্য দূর করার মহান দায়িত্ব থাকলেও তা হয়নি রাষ্ট্রের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্যহীন কর্মসূচী ও ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদ রাজনীতির কারণে।
২। নারীবাদ মূলত তিনটি মৌলিক বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত। নারীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রমের সম-মুল্য ও সম্পত্তিতে সম-অধিকার; কিন্তু এই মূল্য বিষয়গুলোকে পাশ কাটানোর জন্য অনেক ‘উগ্র নারী স্বাধীনতা’র ধারণাকে ‘নারীবাদ’ হিসেবে এক করে ফেলার চেষ্টা করেন।
৩। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি একদিনে গড়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও আতœত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা । আর স্বাধীনতা অর্জন করতে নারীদের অবদানকে অস্বীকার করে না কেউ। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন , রাজৗনতিক গণজাগরণসহ সকল বিষয়ে নারীদের ভুমিকা প্রশংসনীয় । তাছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তী স্বৈরশাসন অবসানের মূল নেতৃত্বে নারী সমাজের অংশগ্রহণ পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখলে ও নারীবাদের মূল লক্ষ অর্জন সম্ভব হয়নি।
৪) বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্রসমূহ গণতান্ত্রিক ও কল্যাণকর ধারণা পোষণ করলেও নারীবাদের মূলতত্তে¡র সাথে দ্বা›িদ্বকতা কমেনি। ‘সকল ক্ষেত্রে সকলের সম অধিকার ’ ধারণাটি জন্মগত হলেও সকল শ্রমের বাজারে নারীদের অন্যায়ভাবে একই কাজের জন্য, একই শ্রম ঘন্টায় পুরষদের তুলনায় কম মজুরী প্রাদন করা হয়। পারিবারিক ক্ষেত্রে তাদের অর্থনৈতিক অবদান না থাকার কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খাটো করে দেখা হয়, এমনকি স্বাধীনাতাটি খর্ব করেও নেওয়া হয়। যদিও পারিবারিক জীবনে সূর্যোদয় থেকে সূর্য়াস্ত পযর্ন্ত তার পরিবারে দেওয়া শ্রামটি’র কোন হিসেবে কখনই কেউ করে না। অপরদিকে বঞ্চনার আরেকটি বড় অধ্যায় হলো পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া । মুসলিম ও হিন্দু উভয় ধর্মেই পারিবারিক সম্পদ বন্টনের নীতিতে কৌশলে নারীদের বঞ্চিত করা হয়। অথচ আমরা একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণায় বসবাস করি।
৫। ফলে বিতর্কে পরে নারীর প্রকৃত অধিকারের বিষয়টি । নারীবাদ ধারণাটি বার বার মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। আজকের অশিক্ষিত ও অসচেতন নারীদের এ বিষয়টির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তবেই নারীরা তাদের প্রকৃত অধিকার খুঁজে পাবে- নারীবাদ বাস্তবতা পাবে।
-: লেখক :-
ফারজানা হক স্বর্ণা
প্রাক্তন ছাত্রী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।