প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা করোনার প্রভাব পরেছে ঠাকুরগাঁওয়ের আমের বাজারে

করোনার প্রভাব পরেছে ঠাকুরগাঁওয়ের আমের বাজারে

298
0

ফিরোজ সুলতান, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : করোনা মহামারীর প্রভাব পরেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী সূর্য্যপুরী আম বাজারে। মাটি এবং আবহাওয়ার কারনে দেশের অন্য কোথাও এ আম হয়না বলেই এর একটি বিশেষ চাহিদা রয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে।

ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় বাজার গুলোতে এবার সূর্য্যপুরী পাকা আম বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকা কেজি দরে। আর কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা কেজি দরে। করোনার প্রভাবে বাজারে ক্রেতার আগমন না হওয়া এবং অন্য জেলাগুলো থেকে পাইকারী ক্রেতাদের আম ক্রয়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারের এমন বিপর্যয় ঘটেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ।

ইতিমধ্যেই পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান ও সদর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বসেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার কালিবাড়ি বাজার, কালেক্টরেট চত্বর, বাসস্ট্যান্ড, সত্যপীর ব্রীজ, গোধুলী বাজার, সেনুয়া হাট, খোচাবাড়ী হাট, লাহিড়ী হাট, স্কুলহাট, কুশালডাঙ্গী, হলদিবাড়ীসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে আমের ব্যবসায়ীরা আম নিয়ে বসে থাকলেও বাজারে ক্রেতা নেই। দু-একজন স্থানীয় ক্রেতা থাকলেও বহিরাগত ক্রেতা নেই বললেই চলে।
বাজারে সূর্যাপুরী আম প্রতিমণ কাঁচা বিক্রি হচ্ছে ছয়শত থেকে আটশত টাকা, আম্রপালি সাতশত টাকা, হিমসাগর এক হাজার চারশত টাকা, লখনা আমের প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৪’শত টাকা, ল্যাংড়া আমের প্রতিমণ ৬’শ টাকা। কাঁচা আমের তুলনায় পাকা আমের মূল্য অর্ধেকের চেয়ে আরও কম।

গত বছর বাজারে সূর্যাপুরী আম ৫০-১০০ টাকা কেজি, আম্রপালি ৭০-১০০ টাকা কেজি, হাড়িভাটা ৮০-১২০ টাকা, ল্যাংড়া ৯০-১৩০ টাকা, হিমসাগর ৮০-১৫০ টাকা, আশ্বিনা ৫০-১০০ টাকা এবং বাড়ি-৪ আম ১০০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে করোনার প্রভাবে এবার এসব আমের দাম কমেছে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ।

বালিয়াডাঙ্গী বাজারে আম কিনতে আসা তুহিন হাসান তনু থেকে ৪ মণ আম কিনেছেন ৩ হাজার দুইশত টাকা দিয়ে। তিনি জানান, আমের দাম কম শুনে ঠাকুরগাঁও থেকে সকালেই এসেছি আম কিনতে। ভাল মানের আম কিনলাম বেশ কম দামেই।

আম ব্যবসায়ী নজরুল ও জালাল জানান, বাজারে আমের ক্রেতাও নেই, দামও নেই। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বাইরে থেকেও আম কিনতে কেউ আসেনি। বিক্রি না হওয়ার কারণে পাকা আম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৪ শত ৩১ হেক্টর জমিতে সূর্য্যপুরী, আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, আশ্বিনা, বাড়ি-৪ সহ বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সুর্যাপুরী ও আম্রপালি আমের বাগান বেশি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গত ৩ বছর ধরে আম বিক্রি করছেন মিলন, পায়েল ,তানভীর নামের বেশ কিছু শিক্ষার্থী। তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর অনলাইনে তেমন সাড়া নেই। দাম কম হলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রত্যেকে ২০ মণ আমের অর্ডার পায়নি। গত বছর প্রায় ২’শ মণ আম বিক্রি করেছি অনলাইন প্লার্টফমে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সূর্যপূরী আম সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এখানকার আমে পোকা থাকেনা এটা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমের আকার দেখতে ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। জেলায় আমের ভালই ফলন হয়েছে। করোনার কারণে ব্যবসায়িরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হবেন।

জেলার নব নিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে এবং লকডাউনও চলছে জনস্বার্থে। আম বিক্রিতে অনলাইন প্লাটফর্ম এখন বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া ছাড়া এই মুহুর্তে কোন কিছু বলার নেই। যদি তারা কারিগরি সহায়তা চান, আমাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের পরামর্শ প্রদান করা হবে।