প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা সুন্দরবনে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বাঘ

সুন্দরবনে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে বাঘ

110
0

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট:

বিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ পূর্ব সুন্দরবনে তিন দিনে তিন বার বাঘের দেখা পেলেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে বনে প্রথম প্রবেশ করেই বাঘের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা। সাঁতরে নদী পার হওয়ার বিরল দৃশ্য মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা।

বন বিভাগ জানায়, গতকাল রোববার সকাল ৭টার দিকে ‘এমভি ক্রাউন’ নামে পর্যটকবাহী জাহাজ পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার রেঞ্জের কটকা টাওয়ারের খালে প্রবেশ করলে একটি বাঘ সাঁতরে নদী পার হতে দেখেন পর্যটকেরা। আগের দিন শনিবার সকাল ৮টার দিকে ‘এমভি বন সাম্পান’ নামে অপর একটি পর্যটকবাহী জাহাজের পর্যটকেরা কচিখালী নদীতে আরও একটি বাঘ সাঁতরে যাওয়ার বিরল দৃশ্য দেখেন।

এ ছাড়া, শুক্রবার বিকেলে বনরক্ষীরা নিয়মিত টহলকালে শরণখোলা রেঞ্জ অফিস এবং আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের মধ্যবর্তী এলাকার বনে একটি বাঘের দেখা পান। পৃথক তিনটি স্থানে বাঘ দেখার দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন পর্যটক ও বনরক্ষীরা।

এর আগে গত ৮ আগস্ট সকালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের অফিসের সামনে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পান বনরক্ষীরা। বিশাল রয়েল বেঙ্গল টাইগারটি বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে। এ সময় মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন এক বনরক্ষী।

এ ছাড়া, গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি অফিসের পুকুর পাড়ে দেখা মেলে জোড়া বাঘের। প্রায় ২২ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করে বাঘ দুটি আবার বনে ফিরে যায়। এদিকে ২৪ ফেব্রুয়ারি কটকা এলাকায় তিনটি বাঘ দেখতে পান বনরক্ষীরা।

শরণখোলা রেঞ্জের কটকা পর্যটন স্পট ও অভয়ারণ্য কেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুরজিৎ চৌধুরী প্রত্যক্ষদর্শী পর্যটকদের বরাত দিয়ে জানান, গতকাল রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টার দিকে ‘এমভি ক্রাউন’ নামে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ কটকা টাওয়ারের খালে ঢোকার সময় একটি বাঘ দেখতে পান। বাঘটি সাঁতরে খাল পার হচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে উল্লসিত হয়ে ওঠেন পর্যটকেরা।

খুলনার পপুলার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ জামাল খান পপলু জানান, তাঁদের পর্যটকবাহী ‘বন সাম্পান’ জাহাজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে কটকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। জাহাজটি সুপতি এলাকা অতিক্রম করার সময় একটি বাঘ সাঁতরে নদী পার হতে দেখে। এ সময় “বাঘ, বাঘ” বলে চিৎকার করতে থাকেন পর্যটকেরা।

বন সাম্পান জাহাজে পর্যটক হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুল খান। তাঁর বরাত দিয়ে শাহ জামাল পপলু জানান, তাঁরা যে বাঘটি দেখতে পান সেটি ছিল একটি বাঘিনী।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কোলাহলমুক্ত থাকায় বাঘসহ বন্যপ্রাণী নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। যার প্রমাণ হিসেবে প্রথমবার বনে প্রবেশ করেই বাঘের দেখা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। পর্যটকবাহী জাহাজ এম ভি ক্রাউন ও বন সাম্পানের পর্যটক এবং বনরক্ষীরা পৃথক পৃথক স্থানে তিনটি বাঘ দেখেছেন।

এসিএফ মাহবুব হাসান আরও বলেন, বন বিভাগের কঠোর নজরদারিতে বন অপরাধ কমে যাওয়ায় বাঘ, হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। ভবিষ্যতে পর্যটকেরা সুন্দরবনে অহরহ বাঘের দেখা পাবে বলে আশা করি।