প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা গোদাগাড়ীর পদ্মার চরে আবাদী জমির মাটি কেটে বিক্রীর অভিযোগ

গোদাগাড়ীর পদ্মার চরে আবাদী জমির মাটি কেটে বিক্রীর অভিযোগ

707
0

গোদাগাড়ী প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ৬নং মাটিকাটা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ভাটোপাড়া গ্রামের নীচে পদ্মার চরে আবাদী জমির মাটি কেটে বিক্রীর অভিযোগ উঠেছে। গোদাগাড়ীর এই চরগুলো আবাদের উপযুক্ত হওয়ার কারণে এখানকার স্থানীয় চাষিরা সৃষ্টিলগ্ন থেকে বোরো, মসুর, গম, মাস কলাই ও বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু কিছু লোক ড্রেজার দ্বারা আবাদি জমির মাটি ট্রাক্টরে লোড করে বিক্রয় করে চলেছেন। যার কারণে ভূমিহীন কৃষকগণ জমি চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ওই এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, জুমা মসজিদ ও একটি বাজার রয়েছে। বাজারে প্রায় ৪০-৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মাটি তোলা ও সারাক্ষণ ট্রাক্টর চলার কারণে ৯নং চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের জনগণ ও ছাত্র/ছাত্রীদের নদী পারাপারে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ওই ঘাট দিয়ে ভাটোপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শত শত ছাত্রী যাতায়াত করে। ফুলতলা বাজারসহ এলাকায় বন্যার কোন রক্ষা বাঁধ নেই। সারা দিন রাত বালু তোলার নামে আবাদি জমির মাটি রাতের আঁধারে উত্তোলন করে নিচ্ছে বালু মহল। মাটি লোড-আনলোডের ট্রাক্টর চলাচলের কারণে ধুলোবালুতে স্থানীয় লোকদের বাড়ীঘর বিনষ্ট হওয়া, শব্দদূষণ সহ শিশু ও বৃদ্ধরা নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে বলে এলাকাবাসীরা জানান। এভাবে মাটি কাটতে থাকলে হুমকির মুখে পড়বে এলাকার পরিবেশ। ওই এলাকার মধ্য দিয়েই রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাইওয়ে রোড রয়েছে। যা পদ্মার তীর হতে প্রায় ৮ থেকে ২০ ফিট দূরে অবস্থান।
এই গ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ^রোড সংযোগে ২টি রাস্তায় ৩টি কালভার্ট রয়েছে। বালু বোঝায় ট্রাক্টর যাতায়াতের কারণে কদমহাজির মোড় থেকে সাহাদ্বিপুর রোডের কালভার্টটি ইতোমধ্যে ভেঙ্গে পড়েছে। ভাটোপাড়া জামে মসজিদের সামনে দিয়ে বিশ^রোড, সেই সাথে কমিউনিটি ক্লিনিক। সারাক্ষণ মাটি ও বালু বহনের ফলে প্রচুর ধুলো বালি উড়ে পরিবেশ দুষিত হয় বলে জানান স্থানীয় লোকজন। পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গরিব, অসহায় লোকজন পদ্মার জেগে উঠা চরে বোরো, মসুর, গম, মাস কলাই ও চিনা আবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায় পদ্মার জেগে উঠা চরগুলো স্থানীয় লোকজনের এক সময়ের আবাদী জমি ছিল। ভাগ্যের পরিহাস পদ্মার ভাঙ্গনে জমিগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বিধায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমিগুলো চাষাবাদ করার জন্য ভূমিহীন কৃষক সমিতির চাষিরা ২০১৩ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর লীজ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। আবাদি জমি নষ্টের বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর নিকট ৩/৬/২০২১ খ্রি. ২০ পৃষ্ঠার ১০৬০ জন লোকের গণস্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় জনগণ। এ ব্যপারে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জানে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি ঘটনাস্থলে যায়নি এসিল্যান্ডকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেন বালুমহলকে বালু কাটার জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে, মাটি ইজারা দেয়া হয়নি। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)’র নিকট যোগাযোগ করা হলে দরখাস্ত পাওয়ার কথা শিকার করে তিনি বলেন স্থানটি আমি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। সেখানে বালু মহলের লোকজন তাদের জায়গাতে লাল পাতাকা দ্বারা চিহ্নিত করে রেখেছে এবং কৃষকরা সবুজ পতাকা দ্বারা চিহ্নিত করে রেখেছে, মাটি কাটার প্রশ্নই আসে না এবং আমি মাটি কাটতে দেখিনি। তবে হ্যাঁ কোন মাটি যদি বালু মহলের ইজারার এরিয়ার মধ্যে হয় তাহলে কাটতে পারে অন্যথায় নয়। কেউ যাতে নদীর বুকে জেগে উঠা আবাদী জমির মাটি কাটতে না পারে এবং গরীব কৃষকরা চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তার জন্য প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ।