গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়া সরকারি ত্রাণের চাল হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।মধ্যস্বতভোগীরা বরাদ্দকৃত চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। আবেদনের প্রেক্ষিত গত  ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার ২১ টি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪২ টন সরকারি ত্রানের চাল বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসকের ত্রান ও পূনর্বাসন শাখা। গত ৭ অক্টোবর ইউএনওর দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে  প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকল্প সভাপতির বরাবর বরাদ্দপত্র (ডিও) দেয়া হয়। এরমধ্যে সংশ্লিষ্ট খাদ্যগুদাম থেকে ৪ টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নিজেই চাল উত্তোলন করে।একটি প্রতিষ্ঠান প্রায়  পুরোপুরি অর্থ পেলেও  বাকী ১৬ টি প্রতিষ্ঠান নিজে উত্তোলন না করে  অনুমোদিত  প্রতিনিধির( মধ্যস্বতভোগী) মাধ্যমে চাল উত্তোলন করে। নীতিমালা অনুযায়ী বরাদ্দকৃত ত্রাণ (চাল) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আহার্য  হিসেবে বিভিন্ন ধর্মীয়  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মাদ্রাসা/এতিম খানায়) অধ্যায়নরত দুস্থ ও অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের আহার্য বাবদ ব্যতীত অন্য কোন খাতে ব্যায়/বিতরণ করা যাবে না। এমন নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না কেউ।সম্প্রতি বিষয়গুলোর অনুসন্ধানে গিয়ে  এ তথ্য উঠে এসেছে । অনুসন্ধানে জানা গেছে,  পার্বতীপুর ইউনিয়নে দারুল উলুম হামিউস সুন্নাহ নূরানী ও ক্বওমী মাদ্রাসায় ২ টন সরকারি চাল বরাদ্দ দেয় হয়। এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি মজিবুর রহমান জানান,  আমরা  সরকারী ত্রানের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইউএনওর নিকট  আবেদন  করি। কিন্তু  মধ্যস্বতভোগীরা আমাদের বরাদ্দের  চাউল না দিয়ে  ৩৩ হাজার টাকা দিয়েছে। চালটা পেলে আমার অনেক উপকার হতো। আমার মাদ্রাসায় অনেক অসহায় দুস্থ ছাত্র-ছাত্রী আছে তাদের আহারের জন্য আমাদের অনেক চাউল ক্রয় করতে হয়।
একই ইউনিয়নের হালিমা খাতুন তালিমুল কুরআন নুরানী ও ক্বওমী মাদ্রাসা  এতিমখানার সভাপতি আব্দুল্লাহ আনসারী বলেন আমাদের দেয়া বরাদ্দ ২ টন চাউলের পরিবর্তে ২৭ হাজার টাকা দিয়েছে। বরাদ্দের ২ টন চাউলের কথা জিজ্ঞেস করলে পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া  হবে না বলে হুমকি দেয়া হয় । এভাবে তারা ২১ টির মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানে চাল আত্মসাৎ করেছে।  অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে,রহনপুর ইউনিয়নের হিফজুল কুরআন কাওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাপতি  মোখতারুল ইসলাম বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন নিয়ে থাকে। সে প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বরাদ্দ পেলে তা রহনপুর পৌর এলাকার মাষ্টারপাড়ার বিএনপি কর্মী  সেরাজুল ও মোজাম্মেল সহ বিভিন্ন  চিহ্নিত দালাল চক্রকে দিয়ে  এ অপকর্ম করে থাকে ।  তারা   অর্থের বিনিময়ে জেলা প্রশাসকের ত্রান ও পূনর্বাসন শাখা থেকে  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারী বরাদ্দ নিয়ে  এসে প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দকৃত চাউল প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে আত্মসাৎ করে ।এছাড়া বরাদ্দ পাওয়া  প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে  নামমাত্র মুল্যে ডিও কিনে নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের  নায্য পাওনা চাইতে গেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন হুমকি। এমনকি এ বিষয়ে তথ্য নিতে  একজন গণমাধ্যম কর্মী জনৈক মধ্যস্বত্তভোগীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয়া হয়।  ঘটনাটি থানায় জিডি পর্যন্ত গড়িয়েছে।  এ ঘটনায় অভিযুক্ত সেরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,ভুল বোঝাবুঝি থেকে এ  ঘটনা ঘটেছে। জিআর সরকারী চাল ক্রয় প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমরা শুধু প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ক
রা চাল  নায্যমুল্য দিয়ে ক্রয় করে  থাকি।আমরা কোন ভাবেই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত না।
এদিকে বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আদর্শগ্রাম প্রি-ক্যাডেট নূরানী মাদ্রাসায় খোঁজ নিতে গেলে প্রকল্প কমিটির সভাপতি তুহিন রেজা বলেন তারা  আমাকে ২ টন চাউলের  মুল্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা হলেও তারা মাত্র  ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। ত্রানের আবেদন  দেওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান,  রহনপুর ইউনিয়নের ডাইংপাড়ার  মাদ্রাসা শিক্ষক  মোক্তারুলের মাধ্যমে ইউএনও অফিসে  আবেদন দেয়ার কথা বলেন।
একই ইউনিয়নের গৌরিপুর নুরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসা সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন ২ টন চাউলের বরাদ্দের  বিপরীতে তারা  মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। এ টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিতরণ করে দিয়েছি।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন  ত্রানের জন্য আবেদন ইউএনও অফিসের মাধ্যমে  জেলায় জমা হয়। তারপর আমার কাছে আসে যাচাই-বাছাই করার জন্য। যাচাই বাছাই করে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ।পর সে বরাদ্দ  উঠিয়ে কি করলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।
এ বিষয়ে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন যারা আমার কাছে ডিও লেটার নিয়ে আসে।তাদের  সই নিয়ে তাদের চাল দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখারএক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মীর আল মুনসুর সোয়াইব জানান,  এ ঘটনাগুলোতে আমার অফিসের কেউ  জড়িত  থাকলে আমরা তার  বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো ।
এ বিষয়ে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত আনজুম অনন্যা জানান,সরকারি ত্রানের চাল আত্মসাতে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।