আব্দুল খালেক, গোদাগাড়ী, রাজশাহী :
দীর্ঘ ১৫ বছর পর ভোটাররা ভোটাধিকারের স্বপ্ন দেখছেন। কি হবে আগামী নির্বাচনে তা নিয়েও জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। চায়ের আড্ডায়, গ্রামে বাঁশের তৈরি মাচানে বসে চলছে নানা আলোচনা। কে হবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিভাবক?
কেউ বলছেন জামায়াত বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন আবার কেউ বলছেন বিএনপি। এসব আলোচনার মধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটোছুটি করছেন ভোটারদের দ্বারেদ্বারে। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করছেন প্রত্যাহ। গ্রামে গঞ্জে নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে ভোটারদের আশ্বস্ত করছেন। সভা সমাবেশ, মোটরসাইকেল শোডাউন, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, হিন্দুদের পুজা পার্বণ পরিদর্শন সহ নানা আয়োজনে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী বলছেন নতুন নেতৃত্ব দেখতে চায় জনগণ। বলছেন সকল দল দেখা হলেও জামায়াতকে একবার দেখতে। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠের চারিদিকে উষ্ণতার আভাস বিরাজ করছে।

রাজশাহী – ১ (গোদাগাড়ী – তানোর) আসনটির মোট আয়তন ৭৬৭.৫৩ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা মোট ৫২২২৫৪ জন এর মধ্যে পুরুষ ২২৯০৩৩ জন নারী ২৩৬৯৭৬ জন। ভোটার সংখ্যা মোট ৩৭৬৩৬৩ জন এর মধ্যে পুরুষ ১৮৫৯৭৮ জন নারী ১৯০৩৮৫ জন। বিপুল সংখ্যক ভোটারের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক বড় অংশের বসবাস রয়েছে এ আসনে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করে থাকেন। মাঠে ঘাটে কৃষি কর্মে তাদের সময় কাটে অধিক। তাদের বসে আনতেও চলছে নানা তৎপরতা।

এ আসনটি বিগত সময়ে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রভাব ছিল বিস্তর। ব্যারিষ্টার আমিনুল হক ২০০১ – ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯১ সালের পরে পর পর ২ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক মজিবুর রহমান  ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে রাজশাহী -১ (গোদাগাড়ী ও তানোর) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মাঠ পর্যায়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে নিয়মিত মেজর জেনারেল অবঃ শরীফ উদ্দীন, সুলতানুল ইসলাম তারেক ও মাহফুজুর রহমান মিলনকে দেখা যাচ্ছে। মনোনয়নের আশায় কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি তৃণমুলে রয়েছে তাদের পদচারণা। তবে বিএনপির বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশিরাও কেন্দ্রে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

এদিকে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক মজিবুর রহমানের মনোনয়নের ঝামেলা না থাকায় তিনি নিয়মিত সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। গোদাগাড়ী ও তানোরে মাঝে মধ্যে গণসংযোগও করছেন। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মানে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করছেন। কুরআন ও হাদীসের আলোকে দেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির নয়জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী প্রয়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের সহধর্মিণী আভা হক, তাঁর ছোট ভাই বিএনপি চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এ্যাডভোকেট ,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিষ্টার মাহফুজুর রহমান ( মিলন), মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও নিক্সন গ্রুপের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাজেদুর রহমান খান মার্কনি, জিয়া পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারি মহাসচিব অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার কেএম জুয়েল, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন শাহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও শিক্ষাবিদ বিশ্বনাথ সরকার। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর, শিক্ষাবীদ, গবেষক ও লেখক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান । রাজশাহী জেলা ও মহানগরের সমন্বয়ক আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান মুহসেনী।

রাজশাহী জেলার সন্ত্রাস দমন ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ও গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট আশরাফ মল্লিক মুঠো ফোনে জানান, গোদাগাড়ী তানোর আসনে বিএনপির যে কয়েকটি গ্রুপে দ্বন্দ্ব চলছে তাতে করে ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের সহধর্মিণী আভা হককে নমিনেশন দেওয়া উচিত। কারণ এ আসনে বিএনপির ৯ জন প্রার্থী। কেউ কাউকে মানছেন না। একের পর এক দ্বন্দ্ব ঝামেলা লেগেই আছে। তাই এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র পথ আভা হকের নমিনেশন পাওয়া। তিনি নমিনেশন পেলেই সব কোন্দল মিটে যাবে।

জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, আলহামদুলিল্লাহ অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর অবস্থান বেশ ভালো। জয় পরাজয়ের মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। সূরা আল ইমরানে আল্লাহ তাআলা বলেন ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমতা দেন, যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমতা থেকে অপসারিত করেন , যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। তিনি সকল কিছুর উপরে শক্তিশালী ক্ষমতাবান।’ আমরা দাওয়াতি কাজ ও নির্বাচনী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এলাকার সকল জনগণ জামাত প্রার্থীর বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। জামায়াত আল্লার ইচ্ছায় ওজনগণের সহযোগিতায় আগামীতে ক্ষমতায় গেলে সাধারণ জনগণের জন্য যা কিছু কল্যাণকর তার সবটুকুই করার চেষ্টা করবো।

বিএনপি চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিন মুঠো ফোনে বলেন,
কেন্দ্রে খোঁজ নেন। আমাকে বাস্তবে জিজ্ঞেস করিয়েন না। বহু আগাছা ও পাতান টাতান আছে এগুলো সব বাছাই হয়েগেছে ঠিক আছে, ধানের খবর কেন্দ্রতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। আর কিছু বলার নেই এটুকু বল্লাম আর কারও সন্দেহ থাকার কথা না। লুটপাটের রাজনীতি আমি করি না। আমি এমন কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দিই না। জনগণ চায় বলেই আমি দলীয় মনোনয়ন পাবো এবং জনগণের রায়ে বিজয় অর্জন করবো ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও নিক্সন গ্রুপের চেয়ারম্যান এ্যাড.সুলতানুল ইসলাম তারেক বলেন, আমরা মাঠে আছি, আমরা জনগণের সাথে আছি, আমরা জনগণের সুখে, দু:খে তাদের পাশে থেকে সকল সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। ফলশ্রুতিতে জনগণ চায় আমি সব সময় তাদের পাশে থাকি। আমার একটি কর্মীও কোন প্রকার লুটপাট ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নয়। কেউ সামান্য প্রমানও দেখাতে পারবে না। আমি আদিবাসী সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ সনাতন ধর্মীলম্বীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিগত সরকারের আমলে মামলা হামলার শিকার হয়েছি। এ আসনে ৯৫ ভাগ ভোটার আমাকে ভোট দেবে। সেই হিসেবে আমি মনোনয়নের জন্য ১০০ ভাগ আশাবাদী।