প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা উপজেলা নির্বাচন বর্জন সব বিরোধী দলের

উপজেলা নির্বাচন বর্জন সব বিরোধী দলের

45
0

৫টি কারণ

অনলাইড ডেস্ক: জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও থাকছে না বিএনপি। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশের অনুপস্থিতি এবং নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকাসহ পাঁচটি সুনির্দিষ্ট কারণ বিশ্লেষণ করে দলটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা গতকাল এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দলের কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলের যেসব প্রার্থী প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন, তাদের তা প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীসহ বিএনপি জোটের অন্য শরিকরাও উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হওয়ার পর রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। এতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। তাই এই নির্বাচন বর্জন করবে বিএনপি।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গত কিছু দিন ধরে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের পরামর্শ নিয়েছে বিএনপি। নেতাদের কেউ কেউ দলগতভাবে নির্বাচন বর্জন করলেও যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান তাদের বিষয়ে নমনীয় থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে পথে হাঁটেননি দলের নীতিনির্ধারকরা। তৃণমূলের মতামত ও সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত পাঁচটি বিষয় সামনে রেখে নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথমত, দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আদলে উপজেলা নির্বাচন করবে সরকার। এ জন্য দলীয় নেতাদের প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। উন্মুক্ত মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মূলত দেশ-বিদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে এই আয়োজন করা হলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের হাতে। সরকার যাকে ইচ্ছে তাকে নির্বাচিত করে আসবে। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে তাতে ভোটের প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়া হবে। দ্বিতীয়ত, মাত্র তিন মাস আগে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। সেই নির্বাচনে বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। সাধারণ মানুষের সেই সমর্থনে আঘাত দিতে চায় না বিএনপি।

জনগণের মাঝে বিএনপির নৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার ফলে নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যাবে না। এর ফলে উপজেলা নির্বাচনও নি®প্রভ হবে। দেশ-বিদেশে আবার বার্তা যাবে, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন ও গণতন্ত্র অর্থহীন। চতুর্থত, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি হবে আওয়ামী লীগ। ফলে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হতে পারে। আওয়ামী লীগের সেই সংঘর্ষের বিএনপি কোনো প্রতিপক্ষ হতে চায় না। পঞ্চম, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য অটুট রাখার বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছে বিএনপি। সরকার বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলও নির্বাচন বর্জনের পক্ষে ছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়টি তাদের দলের আগের সিদ্ধান্ত। তারা সেই অবস্থানেই অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। ২৭ হাজারের বেশি কারাগারে গেছেন। ফলে তৃণমূলের কর্মীরা নতুন করে মামলা বা নির্যাতনের মুখোমুখি হতে চান না। উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি অগ্রাধিকার পেয়েছে।

এ দিকে বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, স্থায়ী কমিটির সভায় নির্বাচন কমিশন ঘোষিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে ইতঃপূর্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে দলের যে সিদ্ধান্ত সেটা পরিবর্তনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

সভা মনে করে, এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে না। সুতরাং এই উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তাই সহিংস সন্ত্রাসের ব্যাপক বিস্তারের ফলে এ অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি আগামী ৮ মে থেকে শুরু হওয়া সব ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে দলের এমন অবস্থান এরই মধ্যে সারা দেশে জেলা কমিটিকে জানিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, যারা এ সিদ্ধান্ত অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রথম ধাপের ১৫০টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কমবেশি বিএনপির ৪৫ জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হবে ২২ এপ্রিল। বিএনপি মনে করছে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির যে ৪৫ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, এই সংখ্যাটা বেশি নয়। তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবে।

১২ দলীয় জোটের একই সিদ্ধান্ত : উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ১২ দলীয় জোট। জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১২ দলীয় জোট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইতঃপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরো অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তারা বলেন, এই সরকার ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে ধ্বংস করেছে।
১২ দলীয় জোট এই অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এক ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের অভ্যুদয় হয়েছে।
আওয়ামী দখলদার শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের মসজিদ কমিটি থেকে শুরু করে যেকেনো পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বার অ্যাসোসিয়েশনসহ সব জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ১২ দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন,
জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেমসহ জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।