জিখবর ডেস্ক:

গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট দীর্ঘ দিনের। এতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা। প্রতিদিন সকালে গ্রামাঞ্চল থেকে শত শত রোগী আসেন এই হাসপাতালে। চাহিদা মত চিকিৎসা না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা শহরের কোন মিডিকেলে যেতে হয়। চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় এমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় মর্মে জানিয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা। এখানে এক্সরে বিভাগের অনুমোদন থাকলেও মেশিন নষ্ট হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে প্রায় ১৫ বছর যাবত। ফলে রোগীদের যেতে হয় প্রাইভেট ক্লিনিকে। জরুরী বিভাগে ডাক্তার স্বল্পতায় চিকিৎসা দেন ওয়ার্ডবয়। কাটাছেঁড়া, দূর্ঘটনায় জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন তারা। এতে ঝুঁকি তৈরী হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

চিকিৎসা নিতে আসা সরমংলা গ্রামের আল মামুন জানান, গোদাগাড়ী সদরে এত বড় একটি হাসপাতাল আছে কিন্তু ডাঃ স্বল্পতার কারনে আমরা চিকিৎসা নিতে পারছি না। আমার পায়ে ফোঁড়া উঠেছে, ডাঃ ব্যস্ত থাকায় ওয়ার্ডবয় ফোঁড়া ওয়াশ করে দিলেন। উপায় না পেয়ে তাদের হাতেই ওয়াশ করে নিতে হচ্ছে। জ্বর, ঠান্ডা জনিত সমস্যা নিয়ে আসলেও ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়। অনেক বৃদ্ধ মহিলা, পুরুষদেরও দেখি তারা অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ডেলিভারী রোগীদের সাথে নার্সদের অসৌজন্যমুলক আচরণ। ওয়ার্ডবয়দের অত্যাচারে রোগীরো দিশেহারা। 

ডেন্টাল বিভাগেও নেই ডেন্টাল চেয়ার। নাম মাত্র ডেন্টাল চিকিৎসায় নেই কোন আলো। ফলে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না ডাক্তার।
ডেন্টাল চিকিৎসক ডাক্তার বেবি হালদার জানান,গত এক মাসে আমি প্রায় ২৫০ জন রোগিকে সেবা দিয়েছি। দক্ষতা থাকা সত্বেও দাঁতের সকল সমস্যার চিকিৎসা করতে পারছি না। ডেন্টাল চেয়ার নেই, দাঁতের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। ফলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দাঁত তোলা, ডায়াগনোসিস ও ঔষধ লিখে দেওয়া ছাড়া আর কোন চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। ১ টি ডেন্টাল চেয়ার এবং আলোর ব্যবস্থা হলে সকল চিকিৎসা দেওয়া যেত।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা ডেঙ্গু- এনএস ওয়ান ১২৯ টি, কম্বো ১১টি,টিসি ৮৩ টি,
ডিসি ৮৩ টি, হিমোগ্লোবিন ১০৩ টি, ইএসআর ৮৩ টি, ভিডাল ৭৪ টি, এইচবিএস এজি ২৭ টি, এটি ৩১টি, ইউরিনারী ১৬২ টি, প্রেগন্যান্সি টেস্ট ৬৫ টি করা হয়েছে।
চিকিৎসার চাহিদা অনুযায়ী এক্সরে পরীক্ষার প্রয়োজন হয় নিয়মিত। তবে ১৫ বছর আগে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রোগির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কতৃপক্ষ আরও জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন , বিশেষজ্ঞ ( গাইনী এন্ড অবস অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন , বিশেষজ্ঞ ( মেডিসিন) অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ০ জন, সার্জারী বিশেষজ্ঞ অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ০ জন, ডেন্টাল সার্জন অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন, মেডিকেল অফিসার অনুমোদিত ২ জন কর্মরত ২ জন,
মেডিকেল অফিসার পঃ পঃ অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স অনুমোদিত ২৫ জন কর্মরত ২৫ জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ( ল্যাব) অনুমোদিত ২ জন কর্মরত ২ জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ( রেডিও) অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ( ডেন্টাল) অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ( ইপিআই) অনুমোদিত ১ জন কর্মরত ১ জন। এছাড়াও পরিসংখ্যানবিদ, এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, ক্যাশিয়ার ষ্টোর কিপার, কুক/ মশালচি, মালি, অফিস সহায়ক, সুইপার, ঝাড়ুদারের প্রয়োজন থাকলেও নেই একজনও।

প্রশাসনিক প্রধান সহকারী মোঃ অয়ন আযম জানান, আমাদের জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। এখানে পরিচ্ছন্ন কর্মি নেই, রন্ধন শালাতেও লোক নেই, ডাক্তার আছে ২ জন, নার্স- ২৫। ডেপুটেশনে ডাঃ ছিল ১৩ জন তারাও এখন নেই। এতে চাহিদামত চিকিৎসা না পেয়ে রোগিরা মন খারাপ করে।কোন ওটির ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে তাই সিজারসহ অন্যান্য কোন অপারেশনের ব্যবস্থা নেই। ছোট খাটো সমস্যা হলেও আমরা তেমন কোন চিকিৎসা দিতে পারি না। উপায় না পেয়ে রেফার্ড করি সদর হাসপাতালে।