এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জসহ নয়টি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজের অজুহাতে বিভিন্ন নদী-খাল ও ছড়া থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেপরোয়াভাবে চলছে বালু উত্তোলন।বিভিন্ন উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। প্রভাবশালী মহলের আগ্রাসনের শিকার হয়ে পুরো জেলার নদী-খাল-ছড়াগুলো এখন যেনো বালুখেকোদের নিষ্ঠুরতার বলি।প্রশাসনের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জসহ নয়টি উপজেলাতে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবস্থা অনেকটা মগের মুল্লুকের মতো। নিজের ইচ্ছা মতো বালু উত্তোলন করছে। কিন্তু কারও যেন কিছু বলার নেই। এই বালু উত্তোলনের মাধ্যমে একদল মানুষ অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে, আর অন্যদিকে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ছে। ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয় এবং নদীর পাড় ভেঙে যায়। অর্থাৎ নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিরও ক্ষতি হচ্ছে।কোন ধরণের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই অন্তত অর্ধশত স্থান থেকে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন চলছে। উত্তোলিত সে বালু ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাগেরহাট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বালু ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা গ্রামীণ সড়কগুলোর। বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধি না মানার কারণে নদী-খাল ও ছড়া ভেঙ্গে এবারো-থেবড়ো হয়ে গেছে। তবে বালু সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ।সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত বালু খেকোদের তাণ্ডবে বাগেরহাট জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা মোরেলগঞ্জ। উপজেলার বিভিন্ন খাল-ছড়া থেকে বৈধ-অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে খাল ও ছড়ার মানুষের বসতবাড়ি-জমি ভাঙনের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়িত। বালুবাহী বিভিন্ন ভারী যানবাহনের চাপে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের অল্প দিনের মাথাতেই চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে।থেকেও ড্রেজার (গভীর থেকে বালু উত্তোলনের বিশেষ বৈদ্যুতিক যন্ত্র) দিয়ে বালু তোলার আইনি কোন সুযোগ নেই।অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জসহ নয়টি উপজেলাতে সড়কে অন্তত ৫০টি স্থানে প্রভাবশালীদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে বালুর ব্যবসা চালাচ্ছে চক্রটি। ইউপি সদস্য যুবলীগ, ছাত্রলীগ, এলাকায় আওয়ামী লীগের নামে নেতাকর্মীরা প্রতিরাতে বিভিন্ন অংকের চাঁদা তুলছেন। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে আসার তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় জমির মালিক বলেন, ‘কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বালু ও মাটি উত্তোলন। এ বালু দিয়ে বাড়ি, রাস্তাসহ বিভিন্ন ভরাট কাজের ব্যবসা করা হচ্ছে।পানগুছি নদীতে গভীর করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে তার খেসারত দিতে হয় নদী ধারের জমির মালিকদের। ক্ষতি হয় ফসলি জমির। অনেক গাছপালা যায় নদীগর্ভে।বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায়শ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে স্থানীয়রা লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় কারা জড়িত, সে বিষয়ে সবসময় নিশ্চিত হওয়া যায় না। এতে সরাসরি কারও বিরুদ্ধে মামলা করা যাচ্ছে না।