সাইফুল ইসলাম, রাজাবাড়ী:

কালের বিবর্তনে, আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবে, ও জনসচেতনতার অভাবে, দিনের পর দিন, আবহমান গ্রাম-বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তালের গাছ। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত, গোদাগাড়ী, তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, নওগার পোরশা, নিয়াতপুর , আত্রাই সহ বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠের ভিতরে জমির আইলে, পুকুর পাড়ে, বিভিন্ন রাস্তার ধারে, ও বাড়ির আনাচে কানাচে, অসংখ্য পরিমাণে লাইনের ধরে সারি সারি তালের গাছ পরিলক্ষিত হত।  দূর থেকে এসব তালের গাছ দেখে মনে হতো, কি এক অপরূপ সৌন্দর্য।

চৈত্র- বৈশাখ, মাসে তালপাতার আওয়াজে গাছের নিচে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা বিশ্রাম নিত কিষাণিরা। কৃষকরা গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রকারের গানের সুর তুলে বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে সময় কাটাতো তাল গাছের নিচে।

এছাড়া ভাদ্র মাসের সময় তাল পাকলে, গাছ থেকে পাকা তাল পড়ার দুপ,ধাপ, শব্দে কচিকাঁচা যুবক-যুবতী এমনকি বয়জেষ্ঠরাও ছুটে যেত তাল গাছের নীচে।

কিন্তু কালের বিবর্তনে, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে ও জনসচেতনার অভাবে তালগাছ  এখন সবই স্মৃতি।

শীতের মৌসুমে তাল গাছ থেকে রস পেড়ে সকাল সকাল খাওয়ার ধুম পড়ে যায় পাড়া মহাল্লায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এক একটি তাল গাছ ৩০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়, প্রকারভেদে তালের গাছ দুই প্রকার হয়, পুরুষ ও মহিলা। মহিলা তাল গাছের চেয়ে পুরুষ তালগাছের চাহিদা বেশি।

পুরুষ তালগাছের গোড়ালি দ্বারা বাড়িঘর, দোকানপাট, দোচালা খাড়া তিনের ঘর, গরুর গাড়ির ধুরি তৈরি করা হয়।  তাই পুরুষ তালগাছের গুরুত্ব অনেক বেশি।

তাল গাছের পাতা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হাতপাখা, চাটাই, মাদুর, বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রকার খেলার পুতুলসহ বিভিন্ন রকমের মালামাল তৈরি করা হয়। এছাড়া তালের ফল এবং বীজ দুটোই বাঙালি খাদ্য।

সর্বপরি তালগাছ বজ্রপাত থেকেও রক্ষা পাওয়ার উপায় বলে জানা যায়।