এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:বিশ্ব ঐতিহ্য বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটক ও জেলে-বাওয়ালীদের জন্য রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন। তবে রবিবার ও শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর এই গত এক সপ্তাহে সুন্দরবন ভ্রমণে তেমন পর্যটক আসেনি এই বনে। কারণ হিসেবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যটক মৌসুম নয়, তাই পর্যটক আসছেন না।তবে সুন্দরবনে নেই চোখে পড়ার মতো পর্যটক।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও তেমন পর্যটক না আসার কারণ হচ্ছে, এখন পর্যটক মৌসুম না। এরপর এখন নদী উত্তাল এবং বর্ষা মৌসুম। আগামী নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাস হচ্ছে পর্যটক মৌসুম। এই মৌসুমে পর্যটকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবন উন্মুক্ত করা হলেও প্রথম দুই দিনে ২০০ পর্যটক এসেছেন। এ সময়ে জনপ্রতি ৪৬ টাকা হারে ৯ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ সময়ে যেসব পর্যটক এসেছেন তারা সুন্দরভাবে সুন্দরবন উপভোগ করছেন, তারা অনেক খুশি।’
উল্লেখ্য, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট এই তিন মাস মূলত বনের গাছপালা, বন্যপ্রাণী-পশুপাখি ও মাছের প্রজনন মৌসুম। এ জন্য এই সময়টাতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন হওয়ায় এক নতুন রূপে এখন সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি।বৈরী আবহাওয়া এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সুন্দরবনে দেখা মিলছে না পর্যটকদের। এমন অবস্থায় ট্রলার ঘাটগুলোতে অলস সময় পার করছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রলার শ্রমিকসহ পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।
তবে ট্যুর অপারেটররা বলছেন আবহাওয়া ভালো হয়ে গেলে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এই বছর পর্যটকদের সংখ্যা অনেকটাই কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। বর্তমানে দেশের চলমান পরিস্থিতি বিরাজ করছে যে কারণে পর্যটকদের আগ্রহ থাকলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ভ্রমণপিপাসুরা অগ্রিম যোগাযোগ করছেন না। আর যারা আসছে তাদের নিয়ে বনের উদ্দেশে গেলে চালান থাকবে না। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ, তথ্যকেন্দ্র, ফুট ট্রেইলার, ওয়াচ টাওয়ার ও প্রশস্ত রাস্তাসহ নান্দনিক সব স্থাপনা। ঢেলে সাজানো হয়েছে সুন্দরবনের অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো। নতুন রূপে সাজানো করমজলসহ সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে স্থানীয় কিছু লোকজন ও পর্যটকরা ঘুরছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা প্রস্তুত আছি। বন বিভাগের দাবি- নতুন নতুন সব স্থাপনা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে। সেসঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার; যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী রয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের ৩১৯ প্রজাতির মাছ, ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা এবং ১০৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী-পশুপাখির বেশির ভাগেরই প্রজননকাল ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট। এই সময়ে বনের গাছপালার বীজ থেকে চারা গজায়, এতে গাছের সংখ্যা বেড়ে থাকে। আর প্রজননের ফলে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় প্রাণিজ ও জলজ সম্পদ।