আব্দুল খালেক:
‘গোদাগাড়ী ভুমি অফিসে ঘুসের সিন্ডিকেট ’
শিরোনামে জাতীয় দৈনিকসহ দেশের অনেক অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরই রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) জাহিদ হাসানসহ ৪ জনকে বদলি করা হয়েছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অফিস আদেশটি চাওয়া হলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন বদলী প্রশাসনিক বিষয় নিউজ না করায় ভালো।
প্রায় দের বছর আগে গোদাগাড়ী সহকারী কমিশনার ভূমি হিসেবে যোগ দেন জাহিদ হাসান । তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। জমা সহকারী সাজেদুল ইসলাম, কানুনগো মুক্তারুজ্জামান লিটন,সার্ভেয়ার নাজমুল হাসানের যোগসাজশে ভুমি অফিসকে ঘুষের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
গোদাগাড়ী ভূমি অফিসে মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ বহুদিনের। সরকারী বিধানের মতই এই অফিসে ঘুষের নীতি বহাল তবিয়তে ছিল। অফিসটিতে সরকার ১০০% ঘুষ মুক্ত ঘোষণা করলেও টাকা ছাড়া কোন কাজই করতেন না তারা। এসিল্যান্ডের রুমেও ঘুষের টাকা ভাগ বাটোয়ারার অভিযোগ রয়েছে। ঘুষের একটি অংশ অফিস টাইম শেষে এসিল্যান্ডের রুমে পৌছে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মহুরীরাও এদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাচ্ছিলেন না। তারা বলেছেন মুখ খুললে অফিসের লোক আমাদের কাজ করে দেবে না।
এই অফিসে টাকা ছাড়া টেবিল পরিবর্তন হয় না একটি কাগজও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনিময় দলিল, সরকারী কবিলত দলিল,বন্দোবস্ত দলিল, ওয়ারিশ সুত্রে খারিজ সহ বিভিন্ন খারিজের টাকা আদায়ের কথা। এই অফিসে কাগজ দেখে দেওয়ার কথা বলেও নেওয়া হয় ২ শো থেকে ৩ শো টাকা।
সরকারি কবিলত দলিলগুলো (বন্দোবস্ত দলিল) খারিজ হবেনা বললেও মহুরিদের যোগসাজসে তা খারিজ করে দেন জমা সহকারি মোঃ সাজিদুল ইসলাম। ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে খারিজ করে দিচ্ছেন তিনি। কোন সাধারণ মানুষ নিজে খারিজের জন্য দলিল নিয়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। উপায় না দেখে এসব ব্যক্তি এসিল্যান্ডের নিকট আসেন। সেখানেও নিরাশ হতে হয় তাদের। পুন:রায় জমা সহকারী সাজেদুলের সাথে দরমাহাজা করে ১০-১৫ হাজার টাকায় কাজটি করে নেওয়া হয়। ওয়ারিশ সুত্রে খারিজেও লাগে ১০-১২ হাজার টাকা। এছাড়াও ৬৯-৭৮ সালের দলিলের খারিজ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও গোপনে ১০-১৫ হাজার টাকায় সেটিও করে দেওয়া হয়।
গরিব, অসহায় মানুষ যখন খারিজের জন্য যায় তখন কেসটি ত্রুটিপূর্ণ দেখিয়ে খারিজ বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু মহুরিদের মাধ্যমে চুক্তি করলে ব্যাস ঠিক আছে। সাধারণ মানুষ আসলে তাদের পাত্তা দেয়া হয় না। দিনের পর দিন ঘুরানো হয়।
সাজিদুল কেস ফাইল করতেও দলিল প্রতি নির্ধারিত ১২শ টাকা নিয়ে থাকেন। খারিজ পাস করতে কানুনগো লিটনকে দিতে হয় আরও ৩ শ টাকা। এসব টাকা তারা গুনে গুনেই গ্রহণ করেন।
সরকারি সমিতিভুক্ত মালিক পুকুর লিজে যারা অংশ গ্রহণ করেন তাদের কাছে সিডিউল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুকুর প্রতি নেওয়া হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। পুকুর সংক্রান্ত ঘুষ কানুনগো লিটন গ্রহণ করে থাকেন বলে জানায় একাধিক সূত্র।গোদাগাড়ীতে মোট পুকুরের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার টি। যার হিসেব মতে পুকুর লিজে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন কানুনগো লিটন। সিন্ডিকেটের হোতারা কম রেটে সিডিউল ফেললেও গোপনে মোটা অংকের টাকার মাধ্যমে টেন্ডার দেয়া হয়। কানুনগো মুক্তারুজ্জামান লিটন এসব সিন্ডিকেটের অফিসিয়াল হোতা বলে জানা যায়।
এছাড়াও নামজারি, খারিজ বাতিলের মিসকেস সংক্রান্ত ভিপি, অবমুক্ত খারিজ খাজনার জন্য মিসকেস দায়ের করা হয়। সে সব মিসকেস সংক্রান্ত মামলা নিস্পত্তি করার জন্য পার্টির কাছে চুক্তি করে ২০-৩০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে থাকেন। কাগজপত্র ঠিকমত দেখাশুনা না করেই উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য বলে দেয়া হয়। খারিজ বাতিলের মিসকেস সংক্রান্তে বাদী/ বিবাদীর কাগজপত্র দেখে পক্ষে রায় দেয়ার কথা বলে এসিল্যান্ডের নামে নেওয়া হয় ১৫/২০ হাজার টাকা। যা গ্রহণ করতেন সার্ভেয়ার নাজমুল।
এ অফিসটিতে আর যেন কোন দিন কোন অফিসার ঘুষ বাণিজ্য করতে না পারে সে জন্য সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।