এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন বাগেরহাটের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউপি সদস্য, নারী ইউপি সদস্য, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলররা। জনপ্রতিনিধিরা অফিসে না আসায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। অতিদ্রুত স্থানীয় সরকার বিভাগের এই সেবা স্বাভাবিক করে নাগরিক ভোগান্তি নিরসনের দাবি জানিয়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক।
জানা যায়, বাগেরহাটে জেলায় ৯টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা ও ৭৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, নারী ইউপি সদস্য মিলে ১ হাজার ৪১ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পরে জেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন সুবিধামত স্থানে। নিজ কার্যালয়ে আসছেন না অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি। যার ফলে জন্মসনদ, মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারেশকায়েম সনদসহ কোেনা প্রকার সেবা পাচ্ছে না নাগরিকরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গোটাপাড়া ও বেমরতা ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে তেমন কোনো জনপ্রতিনিধির দেখা মেলেনি। বাগেরহাট পৌরসভারও একই চিত্র দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার সারাদিন জেলার বিভিন্ন স্থানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও জন প্রতিনিধিদের উপস্থিতি নেই। জনপ্রতিনিধিদের অফিস কক্ষে তালা মারা। নাগরিক সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীরা
রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিতে আসা আরিফা বেগম বলেন, তিন চারদিন ধরে আসতেছি কিন্তু জন্ম নিবন্ধনের জন্য চেয়ারম্যান মেম্বার কেউ আসে না। জন্ম নিবন্ধনের সবকিছু ঠিকঠাক শুধু চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর বাকি। এই স্বাক্ষরের জন্য জানি না আর কতদিন এভাবে ঘুরতে হবে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন পরিষদে ট্রেড লাইসেন্স নিতে আসা আলিমুজ্জামান বলেন, আগেও কত ভোগান্তি পোহাইতে হয়েছে। এখন চেয়ারম্যান না থাকায় আরও ভোগান্তির মাঝে পড়তে হচ্ছে আমাদের। জানি না এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে। আমরা চাই দ্রুত তারা ফিরে আসুক এবং সাধারণ কার্যক্রম সবকিছু চলুক।
হরিণখানা এলাকার বাসিন্দা আনিরুল ইসলাম বলেন, একটি জরুরি প্রয়োজনে নাগরিকত্বের সনদ প্রয়োজন। তাই পৌরসভায় আসছিলাম কিন্তু মেয়র না থাকায় কেউ দিতে পারেনি।
কিছুক্ষন অপেক্ষার পরে দেখা মিলল কোহিনুর আক্তার ডালিম নামের এক নারী কাউন্সিলরের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে মেয়রসহ কোনো কাউন্সিলর আসেন না অফিসে। আসলে মেয়র না থাকলে তো অফিসিয়াল কাজ করা যায় না। তারপও মাঝে মধ্যে এসে ঘুরে যাই।
এদিকে বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া, ষাটগম্বুজ, কচুয়ার রাড়িপাড়া, বাধালসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে একই চিত্র পাওয়া যায়। তবে কোথাও কোথাও পরিষদের উদ্যোক্তা ও সচিবদের দেখা যায়। কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, অফিসে আসি। অনেক নাগরিকও আসেন সেবা নিতে। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় আমরা কোনো সেবা দিতে পারি না। যারা আসেন তাদেরকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেই।
এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলার চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের কর্মস্থলে না থাকার তালিকা স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক ডা. মো. ফখরুল হাসান। পাঠানো তথ্য অনুযায়ী ৫০ শতাংশ জনপ্রতিনিধি কর্মস্থলে উপস্থিত নেই।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক ডা. মো. ফখরুল হাসান বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী আমরা জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকা ও না থাকার একটা তালিকা পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী নির্দেশনা এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।