এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট  :

ঈদ-উল আযহার ছুটিতে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে ভীড় জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা। সুন্দরবনে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার ঈদের টানা ছুটিতে দর্শনার্থীদের সমাগম বেড়েছে কয়েকগুণ। দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও প্রতœত্তত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।


ছুটির দিনগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের সমাগম ছিল মসজিদ প্রাঙ্গনে। সন্তানদের পরিবার পরিজন নিয়ে মুসলিম ঐতিহ্যের এই নিদর্শণ দেখছেন তারা। ঈদ উদ্যাপন উপলক্ষে দর্শনার্থী স্থান ঘুরে দেখতে পেয়ে খুশি দর্শনার্থীরা।”

প্রতœত্তত্ব অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল ৩ দিনে ১০ হাজারের বেশি দর্শনার্থী বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ ভ্রমণ করেছেন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৭ টাকা। সুন্দরবন বন্ধ থাকায় ষাটগম্বুজের বাইরেও খানজাহান আলী (রহঃ) এর মাজার, মুনিগঞ্জ ও দড়াটানা সেতু এবং শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা রিভার ভিউ ইকো পার্কেও উলে­খযোগ্য দর্শনার্থী ছিল।”

ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদ প্রাঙ্গনে নানা বয়সী মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন আপনজনদের সাথে। ঘুরে ঘুরে ষাটগম্বুজের সৌর্ন্দয্য উপভোগ করছেন তারা। মসজিদ প্রাঙ্গনে অবস্থিত বাগেরহাট যাদুঘরে থাকা খানজাহান (রহঃ) এর ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতœতাত্বিক নিদর্শনও ঘুরে দেখছেন তারা। কেউ ছবি তুলছেন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সাড়ে ৬শ’ বছরের পুরনো স্থাপনার সাথে। শিশুরা খেলা করছে নির্মল পরিবেশে। মসজিদ প্রাঙ্গনে থাকা বিভিন্ন রাইডে চড়ছে শিশু-কিশোররা।

সন্ধ্যা পর্যন্ত মসজিদ কমপ্লেক্সের গেটে টিকিট কাউন্টারে দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল। বিপুল পরিমাণ এই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপদ ও নির্বিঘেœ ভ্রমণ করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভ্রমণ পীপাসুরা।

নওগা থেকে আসা দর্শনার্থী হাসান দম্পত্তি বলেন, চাকুরির কারণে গেল দুই বছর ঈদে তেমন কোথাও ভ্রমণ যেতে পারিনি। বাবা-মায়ের সাথে এলাকায় ছিলাম, আনন্দ করেছি। আজ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আসলাম, অনেক ভালো লেগেছে।”
ঢাকার রামপুরা এলাকা থেকে পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে ষাটগম্বুজে এসেছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ষাটগম্বুজে আসার ইচ্ছে ছিল। এবার ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে চলে আসলাম। এখানে এসে মুসলিমদের যে গৌরবময় ইতিহাস ছিল সেটা সচক্ষে দেখলাম। আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছে ষাটগম্বুজ মসজিদের এই সৌন্দর্য্য দেখে। ঈদের দিনে ষাটগম্বুজের মত একটি পবিত্র ও বিখ্যাত স্থানে এক সাথে সময় কাটাতে পেরে আমরা খুব খুশি। আমাদের জেলার এই বিখ্যাত স্থাপনার সৌন্দর্য্য আমরা সারা পৃথিবীতের ছড়িয়ে দিতে চাই।


শাহিনা বেগম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ষাটগম্বুজ দেখার পরে বাচ্চারা দোলনাসহ বিভিন্ন রাইডসে উঠেছে। তারা খুবই খুশি হয়েছে এখানে এসে। সময়-সুযোগ পেলে আবারও আসবো।প্রতœত্তত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মোঃ যায়েদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর ষাটগম্বুজ মসজিদে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।

এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে একটানা দশ দিন বন্ধ থাকায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রতœত্তত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।


ট্যুরিস্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সব সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সচেষ্ট থাকে। বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে।

টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরাও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করেছে।