প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস আজ

৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস আজ

169
0

ফিরোজ সুলতান, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : আজ ৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে এই দিনে ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ঠাকুরগাঁও ছিল তখন মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানাই ছিল এ মহকুমার অন্তর্গত। এ অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে আজকের এই দিনে।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাক হানাদাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সহজ সরল মানুষের ওপর। এ সময় হানাদাররা গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠণ ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এরপর ১৫ই এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। ঠাকুরগাঁওয়ের ইসলামনগর থেকে ছাত্রনেতা আহাম্মদ আলী, ইয়াকুব আলী, মাজারুল, দবিরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান ও সিরাজউদ্দীনকে ধরে এনে পাক হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁও ক্যাম্পে আটক করে রাখে।

সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধার পিতা শেখ শহর আলী ও তার ভাই শেখ বহর আলীসহ ১৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে হত্যা করে তাদের মরদেহ আব্দুর রশিদ ডিগ্রি কলেজের পাশের একটি পানির কূপে ফেলে দেয়। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা গণহত্যা চালায় সদর উপজেলার জাঠিভাঙ্গা গ্রামে। সেখানে স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় আশ-পাশের অনেক গ্রামের প্রায় তিন হাজার নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে পাকবাহিনী গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে তাদের মরদেহ মাটি চাপা দেয়।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক স্থানে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা। এরই মধ্যে সুসংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামি মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ।

ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শক্রমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাত ছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শক্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে ঠাকুরগাঁও শহর শক্রমুক্ত হয়।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কন্ঠে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে তরুণ-যুবক সবাই। এদিন সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরসহ জনপদ ও লোকালয়ে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দের মিছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর।

এদিকে, ঠাকুরগাঁও পাক হানদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ঠাকুরগাঁও জেলা । এছাড়াও বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।