গোদাগাড়ী প্রতিনিধি :
গোদাগাড়ীর কাকনহাট পৌরসভায় নানান দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বাণিজ্য, ট্যাক্স বিভাগে অনিয়ম এবং ক্যাশিয়ারের ক্যাশবুক হিসাবে একচ্ছত্র আধিপত্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কাকনহাট পৌর মেয়র আতাউর রহমানের নাতি সিহাবুল্লাহ ( চয়ন) ও সচিব রেজাউল করিম সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের নিয়ন্ত্রক বলে জানান সাবেক এক কাউন্সিলর। চয়ন ও রেজাউল করিমের যোগসাজশে নিয়োগ বানিজ্য করেছেন সাবেক মেয়র আতাউর রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাউন্সিলর জানান, মেয়র আতাউর রহমান মেয়র থাকাকালীন সময়ে মোট ৬ জন লোক নিয়োগ হয় পৌরসভায়। এদের মধ্যে স্টোর কিপার হিসেবে নিয়োগ পান মেয়রের নাতি সিহাবুল্লাহ (চয়ন), কম্পিউটার অপারেটর সিহাব, সেনেটারী ইন্সপেক্টর আসাদুল ইসলাম, সহকারী কর নির্ধারক মহসিনা খাতুন, সার্ভেয়ার ইফতেহাদ আলী ও এমএলএসএস শরিফুল ইসলাম।
এই ছয়জনের কাছে মোট ১ কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন মেয়র আতাউর। যার সব টাকায় নাতি চয়ন ও সচিব রেজাউল করিমের মাধ্যমে গ্রহণ করেন তিনি।

এছাড়াও ট্যাক্স নির্ধারক সারওয়ার হোসেনের (রুবেল) বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। আর এভাবেই লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছেন এই কর্মকর্তা। টাকার বিনিময়ে ট্যাক্স কমানোর বিষয়টি তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্যাক্স নির্ধারক সারওয়ার সিগারেট খেতে খেতে আমাদের বলেন এমন কাজ তিনি করেননি।

ক্যাশিয়ার ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ করেন কাউন্সিলর আনারুল ইসলাম। জানা যায় ক্যাশিয়ার ক্যাশবুকে বিলের পরিমান বাড়িয়ে লেখেন। সেটা বিল হওয়ার পরে কাটাছেঁড়া করে আবার কমিয়ে দেন এবং বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেন। তবে ক্যাশিয়ার ইউসুফ তা সাংবাদিকদের সম্মুখে স্বীকার করেন নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাকন হাট পৌরসভার সচিব রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আপনারা সময় হলেই জানতে পারবেন। তবে তিনি তার সংশ্লিষ্ঠতার বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করতে রাজি হননি।

পৌরসভার অর্থলোপাটের কথাও বলছেন একাধিক সূত্র। সরজমিনে গিয়ে জানা যায় পৌরসভার বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ আসলেও সেসব অর্থ উপযুক্ত জায়গায় ব্যয় না করে কিংবা আংশিক কাজ দেখিয়ে ভুয়া বিলভাউচার দেখিয়ে সব অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন মেয়রসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা। কর্মকর্তারা ক্যাশবুক দেখাতেও পারেনি।

এডিপির বছর ওয়ারি কতটাকা ফান্ড হয়েছে এবং তা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা দেখাতে পারেনি কর্তৃক্ষ। হাটের পূর্বসাইডে ড্রেন নেই। সব সময় জলাবদ্ধতা থাকে এখানে। মিশন মোড় থেকে শুসনিপাড়া পর্যন্ত পুরোটাই রাস্তা ভাঙ্গা। কাজ আসে টাকা আসে। কিন্তু টাকা হাত বদল হয় মাত্র, কাজ হয়না ঠিকমত। এ পৌরসভাটিতে যেভাবে বরাদ্দ আসে ঠিকমত যদি কাজ হতো তাহলে পৌরসভাটি মানসম্পন্ন একটি পৌরসভায় রূপান্তর হতো বলে জানান এলাকার জনসাধারণ।

রেললাইন থেকে শুরু করে কাকনহাটের সবগুলো রাস্তার উপর হাটের দিন বাজারের পসরা বসিয়ে বসে থাকে খুদ্র ব্যবসায়ীরা। এদের কাছ থেকে কয়েকজন মাসিক মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। যার কারণে হাটের দিন এসব রাস্তা দিয়ে যানজট লেগেই থাকে।

বছর ওয়ারি আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম বলেন তাকে কয়েকদিন সময় দিতে হবে।

কাকন হাট পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। সরকার পতনের পর তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানান পৌরসভার একাধিক সূত্র।

সব বিষয়নিয়ে পৌরসভার ২০১ নং কক্ষে বর্তমান প্রশাসক মো: মহিনুল হাসান এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য গেলে তার কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়।