প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা তানোরে বাঁশ-বেত শিল্পের কারীগর চিচিলিয়া হেমরম ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াছেন

তানোরে বাঁশ-বেত শিল্পের কারীগর চিচিলিয়া হেমরম ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াছেন

361
0

তানোর প্রতিনিধি ঃ ছেলের জন্মের পর থেকেই স্বপ্ন ছিলো ছেলেকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। সেই স্বপ্ন বাস্তাবে রুপ দিতে শুরু করেছে তানোরে বাঁশ বেতের কারীগর চিচিলিয়া হেমরমের। মাঠে কাজ শেষে অবসর সময়ে শুরু করেন পৈত্রিক পেশা বাঁশ ও বেত শিল্পের কাজ।

অভাবের তাড়নার মধ্যেও ৪ মেয়ের ২জনকে এসএসপি পাশ করিয়ে ও ২ মেয়ের ১জনকে ৮ম শ্রেণী ও আবেক মেয়েকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে ঢাকা বিইউবিটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছেন।

কঠোর পরিশ্রমের ফসল একমাত্র ছেলে এখন ঢাকার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ২য় বর্ষে পড়াছেন। নৃগোষ্ঠীর দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের ছেলে রিপন সরকারী সহায়তা না পাওয়ায় মানবেতর ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখা পড়া।

তানোর উপজেলার মুন্ডমালা পৌর এলাকার মাহালী পাড়ার আদিবাসী মৃত মোসেস মার্ডির বিধবা স্ত্রী চিচিলিয়া হেমরম নিজে লেখা পড়া না জানার আক্ষেপ থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার। সরকারী কোন দান অনুদান না পাওয়া চিচিলিয়া হেমরমের ভরসা হয়ে উঠে বাঁশ ও বেত শিল্প।

গত প্রায় ৯বছর আগে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে স্বামী মোসেস মার্ডি মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ভেঙ্গেপাড়া অসহায় এই নারী নিজের ইচ্ছে ও মাঠে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি অবসর সময়ে শুরু করেন পৈত্রিক পেশা বাঁশ ও বেত শিল্পের কাজ। জীবন সংগ্রামে হার না মানা চিচিলিয়া হেমরমের অবসর সময়ে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি এসব পন্য সামগ্রী তৈরি করে একদিকে যেমন ধরে রেখেছেন বংশীয় ঐতিয্য অন্যদিকে সংসারের খরচ চালিয়ে ছেলে মেয়েকে করেছেন শিক্ষিত।

মাহালী পাড়ার প্রতিবেশীরা বলছেন, চিচিলিয়া হেমরম কঠোর পরিশ্রমি একজন সংগ্রামী নারী, স্বামীর মৃত্যুর পরও ২ মেয়ের লেখা পড়া বন্ধ করান নি ২ মেয়েকে এসএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন আর একমাত্র ছেলেকে পড়াচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ারিং এ। বাঁশ ও বেত দিয়ে তার তৈরি এসব সামগ্রীর মধ্যে অন্যতম ঝাঁকা, ঢালী ও ফুলদানী তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়েই ছেলের পড়ার খরচ যোগাচ্ছেন।

চিচিলিয়া হেমরমের মতে এই মাহালী পাড়ায় তৈরি করা বাঁশ বেতের সামগ্রী যদি একত্রে বিক্রি করার দোকান পাওয়া যেত তাহলে নিশ্চয়তা থাকতো এবং সফলতা পাওয়া যেত। তিনি বলেন, তাদের তৈরি এসব সামগ্রী বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে বিক্রির নিশ্চয়তা পাওয়া যায়না। ফলে ধীরে ধীরে অনেকেই এ পেশা থেকে বেরিয়ে আসছে। অবসর সময়ে তৈরি করা বাঁশ বেত শিল্পের এসব সামগ্রীর চাহিদা থাকলেও বাজার যাত করন সমস্যায় বাধা হচ্ছে এই শিল্প।

তিনি বলেন, বাহারীসব প্লাষ্টিকের এসব পন্যের বাজারে সৌখিন মানুষদের মধ্যে তার তৈরি এসব পন্যের চাহিদা এখনো অনেক বেশী। তিনি বলেন, সরকারী কোন সহায়তা পাওয়া গেলে এই পেশায় টিকে থাকা সম্ভব। তিনি আরো বলেন, মাহালী পাড়ায় প্রায় প্রতিটি ঘরেই বাশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেন তারা। কিন্তু তুলনামুলক ভাবে লাভ হয়না।

যোগাযোগ করা হলে চিচিলিয়া হেমরমের ছেলে রিপন মার্ডি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঢাকায় বিইউবিটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষে পড়ছি একমাত্র মায়ের পরিশ্রমের টাকায়। তিনি বলেন, নিজের পড়া লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সেচ্ছা সেবী সংগঠনের বিভিসন্ন কাজকর্ম করে দিলে অল্প সামান্য টাকা পেলেও তাতে পুষায়না। তিনি আরো বলেন, শুনেছি সরকার আদিবাসীদের লেখা পড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করে কিন্তু আমার ভাগ্যে তা জোটেনি।