প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা সরেস আমে প্রাণচঞ্চল রহনপুর আম বাজার

সরেস আমে প্রাণচঞ্চল রহনপুর আম বাজার

188
0

গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বোচ্চ ২য় আম বাজার রহনপুর। জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে উপজেলা প্রশাসন এ আম বাজারের স্থান পরিবর্তন করে রহনপুর পি.এম আইডিয়াল কলেজ প্রাঙ্গনে ও রাস্তার দুধারে আম কেনা-বেচা চলছে। সরেস আমে প্রাণচঞ্চল চাঁপাইনবাবঞ্জের রহনপুর আম বাজার। জেলা প্রশাসন কর্তৃক গত ২২ মে আম পাড়ার মধ্য দিয়ে রহনপুরে আম চাষীরা ব্যবসা শুরু করে। প্রথম দিকে গুটি ও গোপালভোগ আম দিয়ে বাজার শুরু হলেও বর্তমানে বাজারে গুটি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, গিরিয়াদাগী, কালিভোগ প্রভৃতি জাতের আম দেখা যাচ্ছে। আম মৌসুমের শুরুতেই মহামারী করোনা ভাইরাস চরম আকার ধারন করলে জেলা প্রশাসন পরপর দু সপ্তাহ কঠোর লকডাউন ঘোষনা করে। বর্তমানেও কিছু নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য বিধি আরোপ করে লকডাউন চলমান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আম ব্যবসায়ীরা রহনপুর আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। যার ফলে আম বাজার জমে উঠতে লেগেছে। লকডাউনের কারনে আম ব্যবসায়ীরা সময় মত আসতে না পারায় এবং আমের আড়ৎগুলোর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় অনলাইন আম ব্যবসায়ীরা বেশ চুটিয়ে ব্যবসা করেছে। অনলাইন আম ব্যবসায়ীদের কারনে কুরিয়ার সার্ভিসের স্থানীয় শাখাগুলো চরম ব্যস্ত সময় পার করছে। এবছর উপজেলায় প্রায় ৫০টির অধিক অনলাইন আম ব্যবসায়ী রয়েছেন। অনলাইন আম ব্যবসায়ীগণ খুব সতর্কতার সাথে গ্রাহকের মন জয় করার লক্ষ্যে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। এবার অন্যান্য বারের তুলনায় অনলাইন আমের ব্যবসা খুব ভালো চলছে। অনলাইন ব্যবসায়ী আম-ম্যাংগোর পরিচালক পারভেজ শেখ, পিওর ম্যাংগোর পরিচালক রিফাতুজ্জামান রিফাত, হ্যালো ম্যাংগো চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিচালক হাসান আলী মন্ডল হিমেল, ম্যাংগো কর্ণারের পরিচালক তাসরিফ আহমেদ জানান, এবার আমের ফলন ভাল হওয়ায় ব্যবসা নিয়ে তারা প্রচন্ড আশাবাদী ও প্রচুর পরিমানে অর্ডারও পাচ্ছে। তবে বর্তমানে কুরিয়ার সার্ভিসের সেবার মান নিয়ে সাধারণ গ্রাহক ও অনলাইন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। সময়মত গ্রাহকের কাছে আম না পৌঁছানো, আম পঁচে যাওয়া ও ক্যারেট/কার্টুন কেটে লেবাররা আম বের করে নিচ্ছে, ডেলিভারি ম্যানরা অসদআচরণ করছে বলে অনলাইন আম ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে বাজারে গোপালভোগ ২৩০০-২৫০০, খিরসাপাত ২৫০০-৩০০০, ল্যাংড়া ১৭০০-২২০০, গুটি ৮০০-১৫০০, কালিভোগ ১০০০-১৭০০ ও লক্ষণভোগ ৬০০-১০০০ প্রভৃতি দামে বিক্রয় হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারনে সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য রহনপুরে দীর্ঘদিনের পরিচিত রহনপুর স্টেশন আম বাজারটি বর্তমানে দেড় কিঃ মিঃ দূরে রহনপুর পি এম আইডিয়াল কলেজ মাঠে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু আমের আড়ৎ গুলো পূর্বের জায়গায় থাকায় আম ব্যবসায়ীদের কে দূর থেকে আম ক্রয় করে নিয়ে আসতে হচ্ছে। আম আড়ৎদার আতাউর রহমান বাবু ও আনোয়ার হোসেন বলেন, আমের বাজার বর্তমানে কিছুটা খারাপ হলেও আগামীতে আমের ভাল দাম পাওয়ার ব্যাপারে তারা আশা করছে। রহনপুর আম আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিঃ এর সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিউর রহমান খাঁন বলেন, এ বছর আমের ফলন ভালো হওয়ায় আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা আনন্দে রয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারনে বর্তমানে বাজারে আমের দাম কিছুটা কম থাকলেও আগামী দিনে ব্যবসায়ীরা ভালো করবে বলে তিনি আশাবাদী। ব্যবসার শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আম রপÍানি কম হলেও বর্তমানে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ টি আম ভর্তি ট্রাক রহনপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া গত ২৭ মে থেকে রহনপুর চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে ঢাকা গামী ম্যাংগো এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার কেজি পর্যন্ত আম পরিবহন করা হচ্ছে বলে রহনপুর রেলওয়ের সহকারী স্টেশন মাষ্টার মামুনুর রশিদ মামুন জানান। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার গোমস্তাপুর উপজেলায় ৪ হাজার ২ শত ৫ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৮ শত ৪৫ মেঃ টন। বর্তমান আবহাওয়া আমের ফলনের জন্য উপযোগী হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরন হবে বলে আশা করা যায়। উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুদ হোসেন বলেন, আমের ফলন ভাল হলেও চলমান করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারনে আম চাষী ও ব্যবসায়ীগণ আমের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তবুও সব শঙ্কা কাটিয়ে আম ব্যবসায়ীগণ উপকৃত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আম ব্যবসার সাথে জড়িত সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ব্যবসা করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং বর্তমানে আম বাজার ব্যবস্থা খুব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সর্বদা প্রশাসনের সহযোগীতা থাকবে বলে জানান।