প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা বাগেরহাটে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ২৭ ইউপি ভবনে সেবা নিতে আসে লাখো মানুষ...

বাগেরহাটে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ২৭ ইউপি ভবনে সেবা নিতে আসে লাখো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে

55
0

এস এম সাইফুল ইসলাম কবির , বাগেরহাট:

বাগেরহাটে সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ২৭ ইউপি ভবন দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। এসব ভবনের কোনোটির পলেস্তরা খসে পড়ছে, কোনোটির দেয়ালে ধরেছে ফাটল, আবার কোনটির ছাদ বেয়ে পড়ছে পানি। এ অবস্থায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন পরিষদগুলোতে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নাগরিক সেবা নিতে আসা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের তেলিগাতি, বলইবুনিয়া,বাধাল, ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া, গাংনী, কলাতলা, রায়েন্দা, রামচন্দ্রপুর ও বড়বাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ পরিষদ ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে সেবা গ্রহণ করেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ।

সরেজমিনে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতীতে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ভঙ্গুর অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তুরা খসে পড়ছে। ভবনের ছাদেও ধরেছে ফাটল। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়েই চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। নাগরিকরাও ঝুঁকি নিয়ে সেবা গ্রহণ করছেন।

 

বাগেরহাটের বিভিন্ন ইউপি ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে, বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে দরজা-জানালা। জানালার গ্রিলে ধরেছে মরিচা। ভবনের দেয়ালে জন্মেছে আগাছা। শিকড় ছড়িয়েছে ভবনের চারদিকে।

কচুয়া উপজেলার বাঁধন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, সেবা নিতে আসা মানুষদের দীর্ঘ লাইন। সবার মধ্যেই ভবন নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছেন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

শুধু বাঁধন ইউনিয়ন পরিষদ নয়, তেলিগাতি, বাধাল, রায়েন্দা, ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া, বলইবুনিয়া, গাংনী, কলাতলা, রামচন্দ্রপুর, বড়বাড়িয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৭টি পরিষদের চিত্র একই রকম। এর মধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে অন্তত ৯টি পরিষদ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পরিষদে সেবা নিতে আসেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ।

সেবা নিতে আসা মমতা রানী দাস বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা নিতে এসেছি। বয়স হয়েছে, বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। মানুষের ভিড়ের মধ্যে কোথায় বসব। পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ভবনে কোনো জায়গা নাই, তাই গাছের নিচে বসে আছি। প্রচণ্ড গরম, আমার মতো অনেক মানুষ সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছে।’

তেলিগাতি পরিষদে সেবা নিতে আসা মাহফুজ শেখ বলেন, ‘পরিষদে কোনো সেবা নিতে এলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। তাই সেবা নেওয়ার সময় পর্যন্ত পরিষদের বাইরে থাকি। বর্তমান সরকারের সবকিছুতে আধুনিকতা ও ডিজিটাল উন্নয়ন আর স্মার্টের ছোঁয়া লাগলেও এমন জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই স্পর্শ করেনি। এটি এই ইউনিয়নবাসীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার আগে এই ইউনিয়ন পরিষদকে আধুনিকায়ন করা অত্যন্ত জরুরি এবং সময়ের দাবি।’

সেবা গ্রহীতা তানিয়া বেগম বলেন, ‘পরিষদের পুরোনো ভবন ভেঙে পড়ছে। তাই টিসিবির কার্ড নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আমরা কয়েকবার এখানে এসে নানা সমস্যায় পড়ছি।’

এসব ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কথা স্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদ আকতার বলেন, ‘পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সেবা দিয়েই গত বছর খুলনা বিভাগের মধ্যে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রমে বিভাগীয় পর্য়ায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি। জরাজীর্ণ ভবনের সেবা দিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছি। সেবার মান উন্নয়নে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

বাধাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকীব ফয়সাল অহিদ বলেন, আমার ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি অনেকদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়েছে। আশেপাশে কোনো ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন যারা সেবা নিতে আসে তারাও ঝুঁকির মধ্যে সেবা গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করে নাগরিকদের ভোগান্তি দূর করার দাবি জানাচ্ছি।

বাগেরহাট এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান বলেন, জেলায় ৭৫ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্য়ায়ে ৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখনও ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার উদয়পুর ও গাংনী পরিষদের নিজস্ব জায়গা নেই। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার ঝিউধারা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন বরাদ্দের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব ভবনের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে নতুন পরিষদ ভবন নির্মান করা হবে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে এবং সেবার মান উন্নয়নে নতুন ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব ভবনগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।