প্রচ্ছদ অন্যান্য পৃষ্ঠা নওগাঁয় থানার সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক আব্বাসকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি

নওগাঁয় থানার সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক আব্বাসকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি

236
0

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দা থানা পুলিশের বিরুদ্ধে থানার গ্যারেজে ফেন্সিডিল ও চুরির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সাংবাদিক আব্বাস আলী। তিনি একটি জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তিনি নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মান্দা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি। পুলিশ প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয়ে তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে হয়রানির অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি তার পরিবার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সাংবাদিক আব্বাস আলী ও তার পরিবার।
জানা গেছে, গত ২৬/১০/২০ ইং তারিখে অফিসার ইনচার্জ হিসেবে থানায় যোগদান করেন শাহিনুর রহমান। যোগদানের গত আট মাসে প্রায় ২০টি গরু চুরি ও দোকান ঘর ও ফসলের মাঠ থেকে শ্যালোমেশিন চুরি প্রতবণতা বেড়ে যায়।
এছাড়া থানা চত্বরের ভেতরে পশ্চিম পাশে ওসির বাসভবনের গা ঘেঁষে পূর্ব পার্শ্বে মোটরসাইকেল গ্যারেজে ভারতীয় নিষিদ্ধ ফেন্সিডিলের স্তুপ পড়ে ছিল। সিসি নিয়ন্ত্রিত থানার ভিতরে কিভাবে ওই ফেন্সিডিলের বোতলগুলো স্তুপ হয়ে পড়ে জমে ছিল। গত জুন মাসে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে দুইটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকে সাংবাদিক আব্বাস আলীকে সংবাদ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। থানার কর্তাব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
গত ৬/১/২১ তারিখে সাংবাদিকের চতুর্থ ভাই উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫) ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যায়। অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্য হয়েছে বলে পুলিশ ময়নাতদন্ত করে। গত একমাস আগে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন থানায় আসে। অথচ গত ২৯জুন এসআই আমিনুল ইসলাম ফোন করে ওই সাংবাদিকের ভাই আফাজ উদ্দিনসহ পরিবারের সকল সদস্যকে ১ ঘন্টার মধ্যে থানায় হাজির হওয়ার জন্য বলে। বিকেলে তার ভাই ইয়ানুছ আলী, আশরাফুল ইসলাম ও আফাজ উদ্দিন সহ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে নিয়ে থানায় হাজির হয়। প্রতিবেদনে স্বাভাবিক মৃত্য বলে জানানো হলেও ১ লাখ টাকা দাবী করা হয়। অন্যথায় বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হবে বলে হুমকি দেন এসআই আমিনুল ইসলাম।

আশরাফুল ইসলাম বলেন, এসআই আমিনুল ইসলাম ফোন দিয়ে আমাদের পরিবারের সবাইকে ১ ঘন্টার মধ্যে থানায় হাজির হতে বলেন। থানায় যাওয়া হলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন স্বাভাবিক বলে জানানো হয়। এছাড়া ১ লাখ টাকা না দিলে ওসি স্যার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিবে না বলে জানানো হয়। টাকা না দিলে প্রতিবেদনটি ভিন্ন করে ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। এরপর আমরা থানা থেকে চলে আসি। হুমকির ভয়ে বড় ভাই ইয়ানুছ আলী ফোনে পুলিশকে কিছু টাকা দিতে চেয়েছিল। তারপরও আমরা ২৫ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু তারপরও এসআই জোরাজুরি করে এবং প্রতিবেদন যা হয় পাঠাবে বলে জানায়। ভয়ে আমার ছোট ভাই আফাজ উদ্দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে আছে। ছোট ভাই আব্বাস আলী সাংবাদিক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আমাদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে থানা পুলিশ।
এব্যাপারে সাংবাদিক আব্বাস আলী বলেন, ওসি যোগদানের পর থানায় চুরির প্রবণতা বেড়েছে। থানার মতো একটা নিরাপত্তা জায়গায় মোটরসাইকেলের গ্যারেজে ফেন্সিডিলের স্তুপ। এমন সংবাদ প্রকাশ করা হলে ওসি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। আমি ও আমার পরিবারের বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর ও তথ্য সংগ্রহ করেন। যদিও আমার বিষয়ে কোন ধরনের মামলা বা অপ্রীতিকর কোন তথ্য তিনি পাননি। কিন্তু তারপরও ওসি আমাকে বিভিন্ন ভাবে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছেন। এখান থেকে আমি পরিত্রান পেতে চাই।
নওগাঁ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক এসএম আজাদ হোসেন মুরাদ বলেন, জেলা পুলিশের একজন কর্তাব্যক্তি যদি সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর পরিকল্পনা করে তাহলে আমরা যাবো কোথায়। এর চেয়ে ঘৃনিত কাজ আর কি হতে পারে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছি যেন কোন সাংবাদিককে অকারনে হয়রানীর স্বীকার হতে না হয়।
মান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম(০১৭৬৫-৭০০০০২) বলেন, প্রতিবেদনে কোন ধরনের মন্তব্য পরিস্কার ভাবে না থাকায় নিহতের বাবা-মা সহ উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছিল। তবে কোন ধরনের টাকা দাবী করার ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, সম্পুর্ন মিথ্যা কথা এবং বানোয়াট তাদের সাথে আমার কোন কথা হয়নি। তার ভাইয়ের ব্যাপারে আমি কাউকে ডাকিনি ওই মামলার আইও আছে আমিনুল ওই বিষয়টা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সে যদি বলে থাকে হুমকি দিয়েছে সেটা সম্পূর্ন মিথ্যা কথা।
নওগাঁ জেলা বাসদের সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মকুল বলেন, পুলিশ দূর্নীতির উর্ধ্বে নয়। যদি আব্বাস কোন ভুল সংবাদ করে থাকে তাহলে পুলিশের সুযোগ আছে পাল্টা প্রতিবাদ করার। কিন্তু মত প্রকাশের অধিকার দমানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে হয়রানি মুলক মিথ্যা মামলা দিবে এটা নীতিগত ভাবে অন্যায়। এমন কর্মকান্ড যদি চলতে থাকে তাহলে পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।