এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট:

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয়  শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বিপুল উৎসাহে আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তিতে আমন আবাদ করছেন তারা। এরই মধ্যে মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চারা রোপণের জন্য পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের মাঠে মাঠে রোপা আমন ধান রোপনের ধুম লেগেছে। পূর্ব আকাশে সূর্য উদয় হলেই দল বেঁধে কৃষক ছুটে চলে মাঠের প্রাণে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে তারা রোপা আমন ধান রোপনের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ জমিতে পানি দিচ্ছেন কেউ বীজতলা থেকে চারা তুলছেন, কেউবা চারা রোপন করছেন।  অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করেছিলেন যেসব কৃষক, তাঁদের চারা নষ্ট হয়নি। এসব বীজ কিনে আনছেন অনেকে।

সরজমিনে দেখা যায়, কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণে সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমির আইলে কোদাল দিয়ে কোপাচ্ছেন, কোথাও মাঠ সমান করার জন্য শ্যালোইঞ্জিন চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে মইয়ের কাজ। কোনো কোনো স্থানে পাওয়ার টিলার ছাড়াও কৃষকরা নিজেই মই টেনে জমি সমান করছেন। আবার কোথাও আমন ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কেউ আবার জৈব সার জমিতে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে তৈরি জমি বৃষ্টির পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। রোদের গরমে কৃষকদের শরীর থেকে বইছে ঘাম, মাথায় বেঁধে রেখেছেন গামছা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা আমন চাষে অধিক আগ্রহী। শুকিয়ে থাকা খাল, বিল, জলাশয়ে ভরছে পানিতে। তীব্র খরায় শুকিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেতেও ফিরে এসেছে আর্দ্রতা। নিচু জমিতে জমেছে বৃষ্টির পানি। আর এই সময়টায় রোপা আমন চাষে ব্যস্ত হয়ে কৃষকেরা উঠছেন। জমি প্রস্তুত, চাষাবাদ এবং ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের।                                                                                                                                              

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, মোরেলগঞ্জে মোট ১৫ হাজার ৫৯০ জন চাষীর মাধ্যমে এবার ২০ হাজার ৪৩৯ হেক্টর আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিআর-১১, বিআর-৫২ ও বিআর-২২ জাতের ধান চাষের জন্য ২০৩০ হেক্টর বীজতলা তৈরি করা হয়।এই অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি পাত হওয়ায় পানি সেচ ছাড়াই এই অঞ্চলের কৃষকরা রোপা আমন ধান চাষ করে থাকেন। এখানকার কৃষকরা জুলাই মাসের শেষে এই রোপা আমন ধানের চাষ করে থাকে। উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে সবজু ধানের কচি চারায় মাঠ ভরে উঠেছে। উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নে সরোজমিনে দেখা যায়, রোপা আমন ধানের জমি চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রের যুগে প্রয়োজনের তাগিদে পাওয়ার টিলারের পাশা পাশি গরুর লাঙ্গল দিয়ে কিছু পরিমাণে জমি চাষ করছে কৃষক।

চাষী হাবিবুর রহমান, মোস্তফা, সিরাজ, ইসলাম, রিপন, শফিকুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গছে, এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়েছে তাই এই অঞ্চলের প্রায় কৃষকেরা উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে রোপা আমন ধান রোপন করছেন। তারা আরো জানায় পানি সেচ না লাগায় এ অঞ্চলের কৃষক অনেকটা কম খরচেই রোপা আমন ধান চাষ করতে পারছে। চারা বিক্রির ব্যাপারে তারা বলেন, এবছর ধান চারার সংকট নেই। মোরেলগঞ্জউপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় আমরা মাঠ পর্যায়ে আমন চারা রোপণে কৃষককে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। মোরেলগঞ্জসদর ইউনিয়নে এবারে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১২৫০হেক্টর ধরা হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ  মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, এবছর উপজেলার ১৬ ইউনিয়নে ২৬ হাজার৩৯৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানে চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উফশী জাতের ৫হাজার৮৫০হেক্টর, হাইব্রিড ১০ হেক্টর ও স্থানীয়২০হাজার ৫৩৫হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ। মূলত জুন-জুলাই মাস আমন ধান রোপণের সময়। এ বছর বৃষ্টিপাতও পিছিয়েছে। আগস্ট এর মাঝামাঝি থেকে কৃষকরা আমনের চারা রোপণ শুরু করেছেন। কৃষি প্রণোদনার আওতায় ধান, গম, ভুট্টা ও সরিষার বীজ এবং সার বিতরণসহ বিভিন্ন প্রদর্শনী দিয়ে কৃষকদের পাশে সব সময় রয়েছে কৃষি বিভাগ। উপজেলাজুড়ে কৃষকরা এখন আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।