সাইফুল ইসলাম, রাজাবাড়ী:

বংশ পরম্ পরায় ৪৭ বছর যাবত মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস ,নাইটকোচ, মিনি বাস,ভ্যান গাড়ী, বাই -সাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইক, স্টিলের তৈরি ট্রাঙ্ক, স্টিলের বাক্স, সরকারি, বেসরকারি, অফিস আদালতের,ও শহর গ্রামের বিভিন্ন বাসা বাড়ির, অন্তত ১৮ থেকে ২০ প্রকারের দেশী, বিদেশী, জং ধরা, মরিচা পড়া, তালা মেরামত ও নতুন চাবি তৈরি করে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের নিকট সরবরাহ করে ৪৭ বছর যাবত সংসার পরিজন নিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ৭০বছর বয়সী এক ব্যক্তি তিনি হলেন রাজশাহীর জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়ন এর কুমরপুর( রানীনগর) গ্রামের মৃত্যু গোলাম রসুল এর পুত্র ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী,ধর্মভীরু, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী, নম্র ভদ্র , সকলের প্রিয় মুখ, (পুরনো তালা মেরামত ও নতুন চাবি তৈরী কারিগর) মো: একরাম আলী। ৫ ই জানুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি হাটে মসজিদ মার্কেটে ভাড়ায় চালিত দোকানে কথা হয় এ প্রতিবেদক এর সাথে ।তিনি এক আলাপ কালে (একরাম আলী) জানান ১৯৫৪ সালে তার জন্ম ৪ ভাই ২ বোনের মধ্যে একরাম আলী (পঞ্চম) জন্মের পরে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বেড়ে ওঠা তার, অর্থ অভাবে পড়াশোনা বেশি দূর এগোতে পারেনি, চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি, এরপর ১৯৭৫ সাল থেকে ২ বছর নিজের বড় ভাইয়ের নিকট (পুরনো তালা মেরামত, ও নতুন চাবি তৈরির কাজ শেখেন একরাম আলী) এর পর ১৯৭৭ সাল থেকে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী হাট, কাকনহাট, বিদরপুর হাট, ও রাজাবাড়ি হাট সহ বিভিন্ন অফিস আদালত বাসা বাড়িতে বাইসাইকেল চালিয়ে গিয়ে (জং ধরা ও মরিচা পড়া তালা ও নতুন চাবি তৈরি কাজ করে) ৪৭ বছর যাবত সংসার পরিজন নিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ৭০ বছর বয়সি একরাম আলী ।

তিনি জানান । কয়েক দশক আগে সরকারি, বেসরকারি, অফিস আদালতের, সরকারি কর্মকর্তারা, ও বিভিন্ন গ্রামের ধনী ব্যক্তিরা , কাজের পারিশ্রমিক ছাড়াও অনেক বকশিস দিত।এখন সেসব বকসিত আর পাওয়া যায় না । এমন কোন বকশিশ পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিবেদককে একরাম আলী বলেন ১৯৯২ সালে একটি কোরিয়ান তালা মেরামত করে তার পারিশ্রমিক ১০০ টাকা হলেও খুশি হয়ে এক বেসরকারি কর্মকর্তা তাকে ১০০০, হাজার টাকা দিয়েছেন, এছাড়াও একটি ৭ ব্যাটারি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত টর্চলাইট মেরামত করে তার পারিশ্রমিক ১০০ টাকা হলেও ৫০০ টাকা দিয়েছেন এক পুলিশ সদস্য ।

 

এছাড়াও এসব কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন ১৯৯২ অথবা ১৯৯৫ সাল হবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাকনহাটে এক হাজী সাহেব তাকে একটি টর্চ লাইট মেরামত করতে দিয়েছিলেন। ওই লাইট মেরামত করতে গিয়ে,ওই টর্চ লাইটের ভেতর রাখা ৩ ভরি ওজনের ২ টি স্বর্ণের চেইন পেয়েছিলেন একরাম আলী। ওই স্বর্ণের চেইন দুটি ও বিশ্বস্ততার সহিত হাজী সাহেবকে ফিরিয়ে দেন একরাম আলী। সে সময় ওই হাজী সাহেব ও ১০০ টাকা লাইট মেরামতর পারিশ্রমিক হলো ৫০০ টাকা বকশিশ দিয়েছিলেন একরাম আলী কে। তিনি আরো জানান আগের মত শরীর আর চলেনা তাই এ উপজেলার কয়েকটি হাট বাদ দিয়ে। শুধুমাত্র রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি হাটে মসজিদ মার্কেটের ১টি দোকান ভাড়া নিয়ে সপ্তাহে ২ টি হাট সোমবার ও শুক্রবার সহ অন্যান্য দিনগুলোতে এ দোকানে বসেই ( পুরনো তালা ও নতুন চাবি তৈরির কাজ ) করে যাচ্ছেন একরাম আলী।

ইতিপূর্বে এই আয় থেকেই অনেক কষ্ট করে ১ বিঘা ৫ কাঠা জমি কিনেছেন তিনি , এছাড়া ৪ ছেলে মেয়েকে খাইয়ে পরিয়ে যথাসাধ্য লেখাপড়া করিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেছেন, দ্বিতীয় মেয়েকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে বিয়ে দিয়েছেন, তৃতীয় ছেলে এইচএসসি পাশ করে একটি ব্যবসা করছেন। চতুর্থ মেয়ে কে ডিগ্রী পাস করিয়ে ইতিপূর্বে বিয়ে দিয়েছেন, এছাড়াও নিজের ভাতিজা সহকারে কয়েকজনকে এ কর্ম শিখিয়েছেন একরাম আলী। সর্বোপরি সংসার পরিজন নিয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন একরাম আলী।

 

তিনি বলেন আল্লাহ যতদিন বাঁচিয়ে রাখবে ততদিন এ পেশায় যুক্ত থাকবেন বলে জানান ৭০বছর বয়সী একরাম আলী।